অভিভাবকদের সহায়তায় ভিক্ষাবৃত্তিতে ঝুঁকছে শিশুরা!

টাঙ্গাইল, দেশের খবর

অভিজিৎ ঘোষ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, টাঙ্গাইল | 2023-08-31 18:31:55

বুলবুলি ও ইফাত, তাদের বয়স ৬ থেকে ৭ বছর। দু’জনই টাঙ্গাইলের করটিয়া সরকারি সাদত কলেজ মাঠে ভিক্ষা করে। কলেজে আগত অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের হাত ও কাপড় টেনে ধরে ভিক্ষা করে তারা।

শুধু বুলবুলি বা ইফাতই নয়, এ রকম আরও ১৫ জন প্রতিবন্ধী শিশু কলেজসহ করটিয়া হাটে ভিক্ষা করে। আর তাদের সহায়তা করে অভিভাবকরা।

গত ৭ আগস্ট সরেজমিনে দেখা গেছে, করটিয়া সাদত সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে শহীদ (৮) নামে এক শিশুকে তার মা কৌশলে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করিয়ে দেন। কিন্তু ভিক্ষা পেতে ব্যর্থ হওয়ায় ওই অভিভাবক শিশুটিকে মারধর করেন।

অভিযোগ আছে, অভিভাবকরা কোলের শিশুকে নিয়ে মাঠে বা স্কুলে ভিক্ষা করাচ্ছেন। যাদের প্রতিদিন গড় আয় ৬০০-৮০০ টাকা।

করটিয়া সাদত কলেজ মাঠে এক শিশু ভিক্ষুকের অভিভাবক আরেফা ওরফে লাকি জানান, সম্প্রতি জামালপুরে বন্যায় বাড়িতে পানি উঠেছে। তাই দুই সন্তান নিয়ে করটিয়া হাটবাইপাস এলাকায় বসবাস করছেন। তার গ্রামের বাড়ি ওই জেলার ইসলামপুর উপজেলার হারগিলা গ্রামে।

তিনি আরও জানান, তার দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর স্বামী আরেকটা বিয়ে করে। তাই উপায় না পেয়ে বড় সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছেন।

ভিক্ষারত অবস্থায় সাথী নামে (১৬) এক তরুণী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি মাকে নিয়ে করটিয়া বাইপাস এলাকায় সড়কের পাশে বসবাস করি। ওই এলাকায় এ রকম আরও ১৫টি পরিবার থাকে। যাদের মূল পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। মা ও আমি আলাদা হয়ে স্কুল-কলেজ, হাটবাজারে ভিক্ষা করি। অনেক সময় অন্যের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ভিক্ষা করতে হয়। এতে বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের পুরুষরা বিভিন্ন কাজ করেন। তারপরও ঈদের কাপড় কিনতে ভিক্ষা করছি।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আওরঙ্গদেব আকন্দ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি করানো আইন পরিপন্থী। কোনো শিশুকে দিয়ে যদি তার বাবা-মা জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি করায় তাহলে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমার মনে হয় আর্থিক অনটনের কারণে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করানো হচ্ছে। কারণ কেউ এই শিশুদের নিরাপত্তা বা রক্ষায় দায়িত্ব নিচ্ছে না। অনেক সময় এসব শিশুদের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

তিনি আরও জানান, অনেকে আর্থিকভাবে লাভবান হতেই শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। এটা থেকে উত্তরণের জন্য প্রতিটা শিশুর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারিভাবে শিশুদের আর্থিক সহায়তা কম দেয়া হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে শিশুদের প্রণোদনা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় থাকলেও সবার জন্য সমান নয়। ফলে পরিবারে আর্থিক অবস্থা খারাপ হলে অভিভাবকরা শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর