টুং টাং শব্দে মুখরিত কুমিল্লার কামার পট্টি। এই শব্দই জানান দিচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা সন্নিকটে। ঈদের আর মাত্র ২ দিন বাকি। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিন-রাত সমান তালে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার কামার শিল্পীরা।
শনিবার (১০ আগস্ট) নগরীর চকবাজার কামার পট্টিতে সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। গত একমাস ধরেই তারা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দা, ছুরি, বঁটি তৈরি ও মেরামতের কাজ করছেন। সময় যত ঘনিয়ে আসছে বেচা-কেনাও বাড়ছে তাদের। শেষ মুহূর্তে দম ফেলার সময় নেই কামারদের।
কুমিল্লা নগরীর বেশ কয়েকটি কামারের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি দোকানে ৩-৪ জন কর্মকার কোরবানির গরু কাটার সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত। শুধু তাই নয়, নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে কুমিল্লা মহানগরীর চকবাজার, রাণীর বাজার, পদুয়ার বাজার, চৌয়ারা বাজার এবং জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বরুড়া, সদর দক্ষিণ, চান্দিনা, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাস ও মেঘনা উপজেলার কামার শিল্পীদের একই দৃশ্য।
টাঙানো মূল্য তালিকা থেকে জানা যায়, পুরনো দা, বঁটি ঝালাই দিতে মজুরি ৪০ থেকে ১২৫ টাকা। গরু জবাইয়ের বড় ছুরি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা, চাপাতি পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। নিজেরা লোহা সরবরাহ করলে মজুরি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, প্রতি পিস বঁটি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা।
চকবাজার কামার পট্টিতে নূর উদ্দিন মজুমদার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর কোরবানির গরু কাটার সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি। গত বছর গরু জবাইয়ের বড় ছুরি ক্রয় করেছি ৪০০ টাকায়। এ বছর একই ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকায়।’
রাখাল কর্মকার নামের এক ব্যবসায়ী জানান, কামার শিল্পীদের দৈনিক মজুরি ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গরু কাটার সরঞ্জাম।
চকবাজার কামার পট্টিসহ প্রতিটি দোকানে এখন দৈনিক গড়ে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এ মৌসুমে প্রতি দোকান মালিক প্রায় লাখ টাকার মতো আয় করবেন। আর কামার শিল্পীরা ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা রোজগার করেন বলে জানা যায়। সারা বছর কামার শিল্পীদের ব্যস্ততা তেমন দেখা না গেলেও কোরবানির ঈদ এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেক বেশি।
একাধিক কামার শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর মাংস কাটার দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি প্রভৃতি বিক্রি করে যে ব্যবসা হয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যবসা হয় কোরবানির ঈদে।
উত্তম কর্মকার নামে এক কামার শিল্পী জানান, এ কাজ তারা ব্রিটিশ আমল থেকে বংশানুক্রমে করে আসছেন। এ পেশায় বর্তমানে যারা রয়েছেন তারা বেশিরভাগই বাপ-দাদার ব্যবসাকে আঁকড়ে ধরে আছেন।
তবে রঞ্জিত বাবু নামে আরেক কামার শিল্পী জানালেন ভিন্ন কথা। তার মতে, বর্তমানে এই পেশাটি অনেকটা মৌসুমি হয়ে গেছে। যার কারণে অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন।