শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাবেক এমপি ও পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ উভয় গ্রুপের প্রায় ২২ জন আহত হন।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে নীলফামারীর জলঢাকাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে এ সংঘর্ষ বাধে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি গ্রুপ পৃথকভাবে শোক দিবস পালন করে আসছে। এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পৃথকভাবে শোক র্যালি শেষে উপজেলার জিরো পয়েন্টে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সেখানে সমাবেশ করছিল।
এ সময় সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টুর নেতৃত্বে আরেকটি শোক র্যালি সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চড়ায়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের বাকবিতণ্ডা থেকে সংঘর্ষ বেধে যায়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সমাবেশের চেয়ার টেবিল ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ হতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় দলের ধাওয়ায় পাঁচ পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে নীলফামারী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে সংঘর্ষের সময় জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান বিএ, জলঢাকা থানা পুলিশের এসআই মামুনুর রশীদ, কনস্টেবল মেহেদী হাসান, রুবেল হোসেন, নাছির উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, পথচারী শাহিনুর রহমান (৪২), দুলাল হোসেন, সাংবাদিক সেফাউল ইসলামসহ ২২ জন আহত হয়েছেন।
আহতদের বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গুরুতর আহত পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
সংঘর্ষের জন্য উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা একে অপরকে দুষছেন। এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, 'বঙ্গবন্ধু চত্বরে আলোচনা সভায় বর্তমান উপজেলা সভাপতি আনসার আলীর মিন্টুর নেতৃত্বে জামায়াত শিবিরসহ লাঠি সোঁটা নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের কর্মীসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমরা এ ঘটনায় মামলা দায়ের করব।'
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনসার আলী মিন্টু বলেন, 'আগে থেকে নির্ধারিত দলীয় কর্মসূচির আলোকে শোক র্যালি নিয়ে যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাই ঠিক সেই মুহূর্তে সাবেক এমপি মোস্তফা, সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।'
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন (নীলফামারী সার্কেল) বলেন, 'দুপুরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের কারণে আমাদের পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা ১৩ রাউন্ড টিয়ারসেল ও ১৩ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করি। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'