সামান্য পুঁজি আর দুইভায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চায়ের হাটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে কাস্টমার ভাল না থাকলেও কয়েকমাস যেতেই জেলার মানুষসহ আশপাশের মানুষের কাছে পরিচিতি হয়ে ওঠে চায়ের হাটটি। চায়ের হাটে চা প্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে দিন দিন। বর্তমানে চায়ের হাটে প্রতিদিন চা প্রেমীর সংখ্যা ২০০০ হাজারেরও বেশি। চায়ের হাটে বিভিন্ন প্রণালীর চা তৈরি করা হয় কাস্টমারের জন্য।
যার ভেতরে অন্যতম লেবু চা, কফি চা, মালটোবা চা, ডাবল হিটের দুধ চা, হরলিক্স চা সহ নানা ধরনের মুখরোচক চা। তবে চা প্রেমীদের কাছে চায়ের হাটের ডাবল হিটের দুধ চা অত্যন্ত প্রিয় বলে জানা গেছে।
শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার আলুকদিয়া হাতিকাটা মোড়ে মনোরম পরিবেশে চা প্রেমীদের জন্য চায়ের হাটটি গড়ে তুলেছেন আব্দুর গাফফার ও তার বড় ভাই কাবলু রহমান। দুই ভায়ের নিপুণ হাতের কৌশলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চা প্রেমীদের জন্য তৈরি হচ্ছে হরেক রকমের চা। রংবেরংয়ের বিভিন্ন প্রজাতির চা খেতে শহরের কোলাহল ছেড়ে মনকে একটু চাঙা করতে চা প্রেমীরা ছুটে যান হাতিকাটার চায়ের হাটে।
অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়তি সময় কাটাতে ছুটে যান চায়ের হাঁটে। তবে লাভের থেকে কাস্টমারের সুবিধা দেখতে হয় চায়ের হাটের মালিক গাফফার মিয়াকে। আধুনিক ডিজিটাল যুগে চা প্রেমীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এখানে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা করছেন তিনি।
গাফফারের চায়ের হাটে যারা নিয়মিত কাস্টমার তারা সকাল ও রাত্রিতে গাফফারের হাতের চা না খেয়ে বাড়ি ফিরবেন না। বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চায়ের হাটে চা প্রেমীদের পদচারণয় মুখরিত হয়ে থাকে। শুধু চুয়াডাঙ্গা নয় পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার চা প্রেমীদের কাছে পছন্দের টি স্টল চায়ের হাট। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা যায় গাফফারের চায়ের হাটে। নিজ দোকানের নামের থেকেও হাতিকাটার চায়ের হাটটি গাফফারের চায়ের দোকান নামেই চা প্রেমীদের কাছে বেশ পরিচিত।
চায়ের হাটে চা খেতে আসা সবুজ নামের এক চা প্রেমী বলেন, 'সাধারণত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার সুবাদেই চায়ের হাটের সঙ্গে পরিচয়। বছর দুয়েক এখানকার নিয়মিত কাস্টমার আমি। চায়ের হাটের চা যদি একবার কেউ পান করে, তাকে এর প্রেমে পড়তেই হবে।'
শুভজিৎ কর্মকার নামের এক ব্যবসায়ী জানান, মাঝে মাঝে রাত্রিতে এমন সময় হয় চায়ের অর্ডার দেওয়ার ৪০ মিনিট পর চায়ের হাটের চায়ের দেখা পান তিনি।
পারমিতা নামের এক চা প্রেমী জানান, 'পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি প্রায় রাত্রিতে আসেন চায়ের হাটে। চায়ের এই দোকানটিতে চা তৈরি করার কৌশল দেখেই চা খেতে মন চাইবে সবার। সাধারণ চায়ের দোকান থেকে চায়ের প্রতিকাপ চায়ের দাম একটু বেশি হলেও চায়ের হাটের এককাপ চা মনকে জুড়িয়ে দেয়।
আব্দুল গাফফার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, প্রতিদিন হাজারো কাপ চা বানান তিনি। চায়ের পাশাপাশি ছোটদের জন্য চিপস, চানাচুর, আইসক্রিম সহ নানান খাবার রেখেছেন তার চায়ের হাটে। বর্তমানে তার চায়ের হাট দোকানটিতে প্রতিদিন ১৫০০০ টাকার চা বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া অন্যান্য খাবার বিক্রি হয় ৫০০০ টাকার মতো। সবমিলিয়ে চায়ের হাটে প্রতিদিন বিক্রি ২০০০০ হাজার টাকা। তবে ঈদ,পূজা আর নানা অনুষ্ঠানে বেচাকেনা বেড়ে যায়।
একজন মানুষের সততা সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণ থাকলে কর্মক্ষেত্রে সাফল্য তার আসবেই এমনটাই বলছেন চায়ের হাটের আগত চা প্রেমীরা।