রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধন করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম। ওই ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন ভবন উদ্বোধনের প্রায় এক বছরেও শুরু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম। ফলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ভবনটিতে বারবার চুরির ঘটনা ঘটছে।
সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এখনও ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এটাকে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল বলা হলেও এখনও অনুমতি মেলেনি। আর ১০০ শয্যার অনুমতি না মিললে ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটিরও অনুমতি পাওয়া যাবে না।
এদিকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন- অনুমতিই না নিয়ে তড়িঘড়ি করে কেন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলো?
শনিবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে হাসপাতালের সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে সেই সময় থেকেই হাসপাতালে রয়েছে লোকবল সংকট, ডাক্তার-নার্সসহ নানান সমস্যা। বর্হিবিভাগে প্রতিদিন এক হাজার ৩০০-৫০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকছেন ৫০০ রোগী। ফলে এই অল্প জনবল দিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। রোগীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই স্থানীয় সংসদ সদস্যর প্রচেষ্টায় ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালটির ২৫০ শয্যায় রূপ দিতে হাসপাতালের একপাশে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর দাবি, নতুন ভবন চালু হলে রোগীদের সেবার মান বাড়বে। নতুন ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে রাখা হয়েছে আধুনিক সব সুবিধা। ভবনটিতে রয়েছে- ৮টি ওয়ার্ড, ৬টি আইসিইউ, ৬টি অপারেশন থিয়েটার, ৩টি ওপিডি, ডে হসপিটাল ১৮টি, ১২৫০ কেজি ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি লিফট, ৫০ হাজার গ্যালন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আন্ডার গ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, কনসালটেন্ট রুম ১৮টি, ১০৩৫ বর্গফুটের একটি মাল্টিপারপাস কক্ষ, ২৫০ কেভিএ ১টি জেনারেটর, ৫০০ কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন, ১টি ডিপ টিউবওয়েল, মেডিকেল গ্যাস সিস্টেম এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা।
হাছেমা বেগম নামের এক রোগী জানান, সকাল ৯টায় নাতিকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে এসে দুপুর ১২টায় ডাক্তার দেখাতে পারেন নি। হাসপাতালে রোগীদের এত ভিড় যে ডাক্তাররাও ভালো করে রোগী দেখছেন না।
কলেজছাত্র রাব্বী জানান, হাসপাতালে তার মাকে নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৩ দিন। মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশি থাকায় প্রথম আট দিন রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
সার্জারি বিভাগের রোগী বৃদ্ধা স্বর্ণলতা রাণী জানান, রোগীর চাপে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে খুবই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, নতুন ভবন উদ্বোধনের পর এক বছর পার হতে চললেও চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ, এটা তাদের ব্যর্থতা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শামীম কবীর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে নানা সংকট রয়েছে। যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বর্তমানে হাসপাতালের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় একটু সমস্যায় পড়তে হয় ডাক্তারদের। তবে সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় রূপ দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা সিভিল সার্জন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি চালু হলে রোগীদের দুর্ভোগ করবে।’
২৫০ শয্যার নতুন ভবনের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডাক্তার এ এস এম মারুফ হাসান এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।