নির্মাণাধীন কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও

বরগুনা, দেশের খবর

খাইরুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-09-01 23:41:04

বরগুনার তালতলীতে লাউপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণাধীন কাজ ফেলে উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদার। গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে নির্মাণ কাজ। এতে বিপাকে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকটির স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া প্রায় দুই হাজার মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এলাকাবাসীরা জানান দ্রুত এ ভবন নির্মাণ হলে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে তারা। এদিকে প্রায় ৪ বছর পর্যন্ত একটি স্কুলের কোনে বসে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে ক্লিনিকের কর্মীরা।

স্কুলের কোনে বসে স্বাস্থ্য সেবা দেওইয়া হচ্ছে 

 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লাউপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক এর ভবন নির্মাণে জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিলে মাসে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দরপত্রের আহ্বানের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের আমিনুর রহমান পল্টু এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। পরে ঠিকাদারের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিছুদিন পরে নির্মাণ কাজ ফেলে লাপাত্তা হয়ে যায় ঠিকাদার। এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে বলা হলেও তার হদিস পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারকে দুইবার কাজ করার জন্য চিঠি দেওয়া হলেও তার কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি বলেন জানান তারা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে কাজ সম্পূর্ণ করে ভবনটি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে।

 

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ভিত্তি ও কলাম তৈরি করে রাখা হয়েছে। নির্মাণাধীন ভবনের পাশে সামান্য কিছু ইট বালু রাখা হয়েছে। নির্মিত ভবনের কলামের ওপরের অংশে রডে মরিচা পড়ে রয়েছে।

কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবার আওতায় এ এলাকার প্রায় ২ হাজার মানুষ রয়েছে। কিন্তু ভবন না থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত  সেবা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দার এক কোনে বসে কোন মতে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। বৃষ্টি এলেই সব কিছু গুছিয়ে নিতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের। ভবন না থাকায় প্রায় ৫ বছর পর্যন্ত এই স্কুলের বারান্দার কোনে বসে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধা, ও শিশুদের। আর স্বাস্থ্যকর্মী একার পক্ষে এ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়েও হিমসিম খাচ্ছে। এ কমিউনিটি ক্লিনিকটির নতুন ভবন টেন্ডার হলেও জুটেনি এখন পর্যন্ত নতুন ভবন। 

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কয়েকজন  বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, এখানে স্কুলের বারান্দায় বসে কোনোমতে একটু সেবা নিয়ে চলে যেতে হয়। একটি ভবন এসেছে তাও আবার নির্মাণাধীন অবস্থায় ফেলে চলে গেছে। এখন দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই।

 

লাউপাড়া কমিনিউটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মী আফরোজা আক্তার রুমি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, একটি স্কুলের বারান্দার কোনে বসে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই গুছিয়ে চলে যেতে হয়। এই ভবন নির্মাণ না হলে ভোগান্তির সীমা থাকবে না। 

এ কমিনিউটি ক্লিনিকের সভাপতি আবুল খায়ের পনু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, এই ক্লিনিকটি ১ বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ কাজ ফেলে ঠিকাদার চলে যায়, এখনো কাজ শুরু করেনি। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টাও করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসে একটি অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আমিনুর রহমান পল্টুর মোবাইলফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী  বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কি কারণে কাজ করতে পারছেন না তা জানিনা। তবে তাকে একাধিক বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। শেষবারের মতো ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। এর মধ্যে কাজ শুরু না করলে তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর