‘পত্রিকায় শুধু লিখে দিয়েন, আমরা কষ্টে আছি’

ময়মনসিংহ, দেশের খবর

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) | 2023-08-29 17:40:40

‘মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনী বাড়িঘর লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেয়। গুলি করে হত্যা করে আমার মাকে। দেশের জন্য মা প্রাণ দিলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। অভাবের তাড়নায় ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালালেও একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড ভাগ্যে জোটেনি। শহীদের সন্তান হয়ে এর চেয়ে বেদনা আমার জন্য আর কি হতে পারে।’

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে কথাগুলো বলার সময় বারবার চোখ ভিজে আসছিল অনীল কান্ত বিশ্বাসের। তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে। বাবা রজনী কান্ত বিশ্বাস মারা গেছেন মুক্তিযুদ্ধের আগেই। ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট শালীহর গ্রামে পাকবাহিনীর গণহত্যায় অনিলের মা খীরদা সুন্দরী শহীদ হন।

আরও পড়ুন: গৌরীপুরে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ: নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫

অনিলের বয়স এখন ৭২। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। ভুগছেন বার্ধক্যজনিত রোগে। কিন্তু তারপরও থেমে নেই তার পথচলা। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ভিক্ষাবৃত্তি করতে হয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়া। গ্রামের একখণ্ড জমিতে ছোট্ট কুঁড়েঘরে অনিলের বসবাস। দাম্পত্য জীবনে তার স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়েটি নবম শ্রেণিতে পড়ে। তার লেখাপড়ার জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে হয়।



সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে শালীহর গ্রামে বাড়ির সামনে দেখা মিলে অনীল কান্ত বিশ্বাসের। সেখানে বসেই জীবনের পাওয়া না পাওয়া গল্প তুলে ধরেন বার্তা২৪.কমের কাছে। তিনি বলেন, ‘আগে দিনমজুরি করে সংসার চালাতাম। কিন্তু এখন বয়স হওয়ায় আগের মতো খাটা-খাটনি করতে পারি না। বৃদ্ধ বলে কেউ কাজে নেয় না। তাই ভিক্ষাবৃত্তি করি। দিন শেষে শ খানেক টাকা আয় হয়। এটা দিয়ে সংসার চলে।’

আরও পড়ুন: মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে শিশু নাহিদ

১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট গণহত্যার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনিল বলেন, ‘সেদিন পাকবাহিনী গ্রামে হানা দিয়ে আমাদের বাড়িঘর লুটপাট শেষে জ্বালিয়ে দেয়। জীবন বাঁচাতে যে যেদিক পারি পালিয়ে যাই। মা দৌড়ে আশ্রয় নেন মুসলমানপাড়ায় এক বাড়িতে। পাকবাহিনী সেখানে গিয়ে মাকে গুলি করে। অনেকক্ষণ যন্ত্রণায় ছটফট করে মা মারা যান। সেদিন মায়ের মরদেহ সৎকার করতে না পেরে মাটিতে পুতে রাখি।’

অনিলের সঙ্গে গল্প করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, এমন সময় আগমন ঘটে তার স্ত্রী সুধা রানী বিশ্বাসের। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগস্ট মাস এলেই সাংবাদিকরা শুধু ছবি তুলে নিয়ে যায়। কিন্ত ছবির মানুষগুলো যে মানবেতর জীবনযাপন করে তাদের পাশে তো কেউ দাঁড়ায় না। এবারই শেষ ছবি আর নাহ।’

কথার মাঝে স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে অনিল বলেন, ‘ওর (স্ত্রীর) কথায় কিছু মনে করবেন না। পত্রিকায় শুধু লিখে দিয়েন, আমরা কষ্টে আছি। সরকারের কাছে ঘর ও একটা ভাতার কার্ড চাই। শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার দাবি এতটুকুই।’

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘অনিল কান্ত বিশ্বাস যেন ভাতা পায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর