স্বচ্ছ নির্বাচনে উদাহরণ তৈরি করল পোশাক শ্রমিকরা

গাজীপুর, দেশের খবর

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-28 21:20:22

গাজীপুর থেকে: কারখানায় উৎপাদন চলছে পুরোদমে। সুইং মেশিনে সেলাই হচ্ছে নামী ব্র্যান্ডের পোশাক। আবার একইসঙ্গে চলছে ভোট উৎসব।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সরেজমিনে এমন দৃশ্যই দেখা গেল গাজীপুরে চন্দ্রায় ইন্টারস্টফ এ্যাপারেলস লিমিটেড নামে তৈরি পোশাক কারখানায়।  

নিরাপত্তার নামে নেই কোনো কড়াকড়ি। কিংবা কাউকে ভোট দেবার বিষয়ে চাপাচাপিও নেই। চারপাশে কর্মমুখর পরিবেশ। শ্রমিকরা যাচ্ছেন পোলিং কেন্দ্রে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নিজের ভোট দিচ্ছেন। আবার ফিরে এসে নিজের কাজে যোগ দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।

কর্মকর্তারা নজরদারি করছেন

 

পার্টিসিপেশন কমিটি (পিসি) নামে পরিচিত শ্রমিক ও মালিক অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি নির্বাচন ঘিরে শ্রমিকদের চোখে মুখে নতুন দিনের সোনালী স্বপ্ন।

রোজিনা খাতুন নামে এক অপারেটর জানান, আমাগো ইলেকশন থাইকা সবার অনেক কিছু শেখার আছে। এ ইলেকশনে স্যাররা (কর্মকর্তারা) যেভাবে নজরদারি করছেন ভোট শেষ হইলে পরে কেউ কারচুপির অভিযোগ করতে পারে না।

নির্বাচন নিয়ে কথা হয় নির্বাচন কমিশনার ও কারখানার জেনারেল ম্যানেজার আমজাদ হোসেনের সঙ্গে।

তিনি জানান, ৪ হাজার ৬০০ শ্রমিক স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। এদের সংখ্যা হবে ১৮ জন। এদের মধ্য থেকেই আবার একজনকে নির্বাচিত করা হবে সহ-সভাপতি হিসেবে।

কারখানার একজন পরিচালক পদাধিকার বলে সভাপতি। আর সহ-সভাপতি ও নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা মিলেই নির্ধারণ করেন কারখানার কর্ম পরিবেশ।

 

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে কেবল শ্রমিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের চর্চা হচ্ছে না, তারা নিজেরাও সচেতন হচ্ছেন। তাদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবেন যিনি তাকেই যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কারখানার জেনারেল ম্যানেজার (ওয়্যারহাউজ) আনজুর হোসেন জানান, বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানার মান বেড়েছে। শ্রম আইন ও বিভিন্ন বিদেশি ক্রেতাদের বেঁধে দেয়া শর্ত অনুযায়ী এখন কারখানায় পার্টিসিপেশন কমিটি (পিসি) নামে পরিচিত  শ্রমিক ও মালিক অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হচ্ছে। এটা অবশ্য আমাদের কারখানায় নতুন নয়। এর আগেও এমন তিনটি নির্বাচন হয়েছে।

দুই বছর মেয়াদী এই কমিটি শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি কারখানার উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে বলেন আনজুর হোসেন।

কারখানার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং ও মার্সেন্ডাইজিং) এস এম শফিকুর রহমান, এ ধরনের নির্বাচন কারখানার কর্ম পরিবেশকে নি:সন্দেহে উন্নত করে। কারখানার উৎপাদনশীলতা বাড়লে শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ে। শিল্প রক্ষায় মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক রক্ষা জরুরি। আর এ নির্বাচন সেই বন্ধনকে আরো জোরদার করবে বলে আশা করছেন এস এম শফিকুর রহমান।

ভোট দিচ্ছেন শ্রমিকরা 

 

কারখানার সিনিয়র কাটারম্যান, শ্রমিক ও মালিক অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি কমিটির বিগত সহ-সভাপতি তুহিন হোসেন এবারও নির্বাচনে প্রার্থী।

তিনি জানান, এ নির্বাচন শ্রমিকদের সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি তাদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি জানান, শ্রমিকরাই যে কারখানার প্রাণ আর শ্রমবান্ধব পরিবেশ রক্ষায় মালিকদের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে সে বিষয়ে তারা সচেতন হচ্ছেন। তৈরি পোশাক খাত নিয়ে কোন ষড়যন্ত্র বা অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা হলে পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এগিয়ে আসার আগেই নিজের প্রতিষ্ঠান রক্ষায় নির্ভয়ে সামনে এসে দাঁড়ান শ্রমিকরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আনজুর হোসেন বলেন, তৈরি পোশাক কারখানা ও ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় সুরক্ষার দেয়াল তৈরি করতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে তৈরি পোশাক খাতে নতুন দিগন্ত।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর