চামড়া বিক্রির অনিশ্চয়তায় ব্লু পদ্ধতি চান আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর. কম, নাটোর | 2023-08-23 23:07:57

চামড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম নাটোর মোকামের দুই শতাধিক আড়তদার। ঈদের পর থেকে এই মোকামে আসা চামড়া কিনছেন আড়তদাররা। অথচ চামড়া বিক্রির কোনো লক্ষণ নেই। ঈদের এক সপ্তাহ পর থেকেই জমে ওঠা এই বাজারে এবার নেই বড় লটে চামড়া বিক্রির আমেজ। দু-একজন ব্যবসায়ী ছাড়া প্রায় সকলেরই কেনা চামড়া অবিক্রিত রয়েছে।

ব্যবসায়ীদের মতে, একমাত্র ওয়েট ব্লু পদ্ধতিই চামড়ার সব অনিশ্চয়তা দূরীকরণের একমাত্র সমাধান। বাতিলকৃত এই ওয়েট ব্লু পদ্ধতি পুনরায় চালু করলেই নায্য দাম পাবে চামড়া ব্যবসায় জড়িত সব পক্ষের। 

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) চকবৈদ্যনাথ মোকামে সাপ্তাহিক চামড়ার হাট ঘুরে দেখা যায়, নাটোরসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে কাঁচা চামড়া আসা অব্যাহত রয়েছে। মোকামের আড়তদাররা জানান, চামড়া আসা অব্যাহত থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনও ট্যানারি মালিক বা তাদের প্রতিনিধি চামড়া কিনতে আসেননি। ঈদের দিন থেকে প্রতিযোগিতা করে মোটামুটি সকল আড়তেই চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। অথচ বর্তমানে গরুর চামড়া ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বর্গফুট এবং খাসির চামড়া ২০ থেকে ২৫ টাকা বর্গফুট হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তখন খুব কম লাভ হলেও বর্তমানে বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে ট্যানারির মালিকরা না আসায় বিক্রি কমে যাওয়ায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

নাটোরের বেশ কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী জানান, চার দশক আগেও তারা চামড়া বিক্রি করে নায্য দাম পেয়েছেন। তখন ব্লু পদ্ধতিতে চামড়া বিদেশে রফতানি করা হতো। কাঁচা চামড়ার মাংসপৃষ্ঠে লবণ ও পশমপৃষ্ঠে চুন মাখিয়ে ৪ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত চামড়া পচনের হাত থেকে রক্ষা করা যেত। কিন্তু ১৯৯০ সাল থেকে সরকার ব্লু চামড়া রফতানি বন্ধ করে দিলে বিদেশি ক্রেতা ও দেশি বিক্রেতা জিম্মি হয় পড়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের ওপর। তখন থেকেই অনিশ্চয়তা ভর করেছে এক সময়ের সম্ভাবনাময় এ শিল্পপণ্যের উপর।

সিংড়ার পুটিমারী গ্রামের মুক্তার আলী জানান, তারা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে ২৭ পিস গরুর চামড়া ও ৩০ থেকে ৬০ টাকা দরে ৮২ পিস খাসির চামড়া কিনেছিলেন ঈদের দিন। প্রায় ১০ দিন নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে আজ নাটোর মোকামে এসে ৪৫০টাকা দরে গরুর চামড়া এবং ৩০ থেকে  ৩৫ টাকা দরে খাসির চামড়ার বিক্রি করেছেন।

মৌসুমী ব্যবসায়ী ফরিদ বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, চামড়ার এত কম দাম কোনো সময় দেখিনি। ট্যানারি ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়েছে। তাদের কাছে সবাই এখন জিম্মি। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের উচিত ওয়েট ব্লুর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সহ-সভাপতি হাজী লুৎফর রহমান জানান,  দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চামড়া আসা শুরু হয়েছে। মোকামের প্রত্যেক ঘরে ঘরে চামড়া জমে স্তুপ হয়ে রয়েছে অথচ এখনো কোন ক্রেতা নেই। ক্রেতা কমে যাওয়ায় কেনা চামড়া নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ব্লু পদ্ধতি চালু হলে চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে।

ব্যবসায়ী গ্রুপের উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আলম বলেন, যেহেতু আমরা লাভের আশায় ব্যবসা করি তাই সরকারেরও উচিত আমাদের বাঁচিয়ে রাখা। সেক্ষেত্রে ব্লু যদি কার্যকর সমাধান হয় তবে সরকারের উচিত পদ্ধতিটি পুনবির্বচনা করে চালু করা। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর