আমাদের দেশে অনেক ধরণের কচু জন্মায়। তবে এরমধ্যে মানকচুর একটা আলাদা কদর আছে। সেটা এর বিশাল আকারের জন্য। আর কোনো কচু গাছ এত বড় আকারের হয়না। চাষাবাদ না হওয়ায় দেশের গ্রামঞ্চলের পথে-ঘাটে, জঙ্গল-ঝোপঝাড়ে অনেকটা অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠে গুণসমৃদ্ধ মানকচু গাছ।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকালে গৌরীপুর পৌরশহরের গো-হাটা সড়ক সংলগ্ন একটি ডোবার পাশে মানকচু গাছের দেখা মিলে। অযত্নে অবহেলা নিয়ে বেড়ে ওঠা বিশালাকৃতির গাছগুলো সহজেই পথচারির নজর কাড়ে।
মানকচুর বৈজ্ঞানিক নাম: Alocasia macrorrhiza/ Alocasia indica হচ্ছে Araceae পরিবারের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে মানকচু দেখতে পাওয়া যায়। একে অনেকেই ঔষুধি হিসেবেও ব্যবহার করেন। তবে কিছু কচু আছে, যা খেলে গলা চুলকাতে পারে। তাই মানকচু ঠিকমতো সেদ্ধ করে খেতে হবে। রান্নার পাশাপাশি মানকচু ভর্তা করেও খাওয়া যায়।
মানকচু বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। স্থানভেদে সর্বোচ্চ গাছ ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ছায়াযুক্ত অনুর্বর মাটির মানকছু গাছ খুব বেশি বড় হয় না। শুকনো উর্বর মাটির গাছ বেশ লম্বা হয়। বর্ষকালে মানকচুর উচ্চতা সর্বোচ্চ হয়। গ্রীষ্ম ও শীতকালে উচ্চতা সবচেয়ে কম হয়।
মান কচু গাছের আলাদা কোনো কাণ্ড নেই। মূলের যে অংশ মাটির উপরে থাকে সেই অংশটিকে এর কাণ্ড বলে।
মানকচুর শাখা-প্রশাখা থাকে না। সরাসরি মূল বা কাণ্ড থেকে প্রথম পাতাটা বের হয়। মানকচুর পাতা উপবৃত্তকার। পাতার রং গাঢ় সবুজ। কচি পাতার রং হালকা সবুজ। গাছের উচ্চতা অনুযায়ী পাতা ৪ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
মান কচুর ফুল ও ফল হয় না। অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটে। কচুর মুল থেকে সরাসরি নতুন চারা জন্মে। তাই একটা গাছ কোথাও জন্মালে সেখানে কয়েক মাসের মধ্যে অনেক চারা জন্মে ঘন ঝাড় সৃষ্টি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কচু খেলে শরীর পুষ্ট হয় এবং শুক্র বৃদ্ধি পায়। কান ও গলার রুক্ষতা দূর করে। এ ছাড়া মানকচুর আরও কিছু গুণ আছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে মানকচু শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ ও দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে মানকচু কার্যকর। মানকচুতে আছে দরকারি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা ক্যারোটিন, যা শরীরে রোগ সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলসকে দূরে রাখে। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভিটামিন ত্বকের জন্য ভালো। মানকচুতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার ও পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো। এটি হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে। ধমনির ধকল দূর করায় রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।