সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যমুনায় বসতভিটা বিলীন হওয়ায় উপায় না পেয়ে কবরস্থানে বসবাস শুরু করেছে হতভাগ্য কয়েকটি পরিবার। শতবছরের পুরনো মিটুয়ানী কবরস্থানে টিনের ঘর তুলে সপরিবারে বসবাস গড়ে তুলেছেন তারা। এছাড়া কবরস্থানের মধ্যে দিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা অবাধে যাতায়াত করছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে দ্রুত কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, যমুনার রাক্ষুসী থাবায় বিগত ৫ বছরে চৌহালী উপজেলার খাষপুকুরিয়া থেকে বাঘুটিয়া ইউপি'র ভুতেরমোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত সাড়ে চার হাজার ঘরবাড়ি, ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা ভাঙনের তাণ্ডবলীলায় মিটুয়ানী ও খাষপুখুরিয়া এলাকায় প্রায় আড়াই শতাধিক বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে নদীর পাশে অবস্থিত শতবছরের ঐতিহ্যবাহী মিটুয়ানী কবরস্থানের উপর বসবাস শুরু করেছে স্থানীয় কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। শুধু বসবাসই নয় কবরস্থানে গবাদি পশুর বিচরণ, গৃহস্থালির কাজ ও যাতায়াতের জন্য সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কবরস্থানে আশ্রয় নেয়া বৃদ্ধ আতর আলী জানান, প্রয়োজন কোন আইন মানে না। ধর্মীয় বিধান বহির্ভূত হলেও কোন পথ না পেয়ে কবরস্থানেই ভাঙা ঘর তুলে বসবাস করে আসছি। বসতভিটা যখন ছিল তখন একা কবরস্থানে যেতেই ভয় পেতাম। আর এখন বাধ্য হয়ে বসবাস করি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, যদিও বসত ভিটা হারানোদের নিদারুণ কষ্ট, তারপরও কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় তাদের উচিত হবে অন্যস্থানে বসতি গড়ে তোলা।
চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ সরকার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই স্কুল-কলেজের মাঠ, পরিত্যক্ত জায়গাসহ কবরস্থানের মধ্যে বসবাস শুরু করেছে।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির জানান, মিটুয়ানী কবরস্থানের ভিতরে কয়েকটি পরিবার টিনের ঘর তুলে বসবাস শুরু করেছে এমন খবর আমি শুনেছি। বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ায় মানবিক কারণে তাদের সুযোগ দিয়েছে স্থানীয়রা। তবে নদী ভাঙন বিধ্বস্তদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। ব্যবস্থা হলে কবরস্থানে আশ্রয় নেয়াদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দেয়া হবে।