ছেলেটি হাঁটছে সড়কের পাশ দিয়ে। লাঠিতে ভর দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। পরনে তার স্কুল ড্রেস। কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ। গন্তব্য নিজ বিদ্যালয়। যেতে যেতে দু-একবার মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফের লাঠিতে ভর দিয়ে ছুটে চলছে বিদ্যালয়ের উদ্দেশে।
বুধবার (২৯ আগস্ট) সকালে গৌরীপুর পৌর শহরের গোলকপুর এলাকায় রমন চৌহান নামে প্রতিবন্ধী এক শিক্ষার্থীর বিদ্যালয় যাত্রার এমন দৃশ্য দেখা যায়। সে গোলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
রমনের বাড়ি গৌরীপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের গোলকপুরে। বাবা শঙ্কর চৌহান। মা পতুল চৌহান। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে রমন সবার বড়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে লাঠিতে ভর দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়।
দুপুরে বিদ্যালয় ছুটির পর রমন ও তার পরিবারের সঙ্গে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-এর কথা হয়। কথাবার্তায় জড়তার কারণে প্রশ্ন করলে স্পষ্ট উত্তর দিতে পারছিল না রমন। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
রমনের মা পুতুল চৌহান বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ায় রমন ছোটবেলা থেকে হাঁটতে পারতো না। উঠানে বসে থাকতো। বড় হওয়ার পর সমবয়সীদের স্কুলে যাওয়া দেখে বায়না ধরে স্কুলে যাবে। পরে স্কুলে ভর্তি করে দেই। শুরুর দিকে আমি রমনকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতাম। কিছুদিন পর ও নিজেই লাঠিতে ভর দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করে।’
রমনের পরিবার জানায়, জন্মের সময় রমনের পা দুটো বাঁকা ও সরু ছিল। অভাবের জন্য চিকিৎসা না হওয়ায় ওর পা দুটো অচল হতে যায়। মুখের কথাবার্তায়ও চলে আসে জড়তা। ছোটবেলায় হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে লাঠিতে ভর দিয়ে চলা শিখে। প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করলেও অভাবের তাড়নায় প্রাইভেট পড়া হয়না রমনের। প্রতিবন্ধী হলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি ভাতা।
বাড়ির সামনেই রমনের বাবার ছোট্ট দোকান। সারাদিনে ২ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয়। আয়ের ওই টাকা দিয়েই টানাটানি করে চলে সংসার।
রমনের বাবা শঙ্কর চৌহান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। ছেলের পড়াশোনার খরচ দিতে পারি না। জনপ্রতিনিধিরাও ছেলেকে ভাতার কার্ড দেয়নি। এরচেয়ে কষ্ট আর কি আছে।’
স্বামীর কথা থামিয়ে দিয়ে স্ত্রী পুতুল চৌহান ছেলে রমনকে বুকে টেনে ধরেন। কপালে চুমো খেয়ে জানতে চান বড় হয়ে কি হবিরে বাবা? উত্তর দেয় না রমন। শুধু মৃদু হেসে মায়ের বুকে মুখ লুকাতে থাকে।
ফিরতি পথে গোলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে কথা হয় প্রধান শিক্ষক প্যাসিফ্লোরা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী হলেও রমন স্কুলে নিয়মিত। সবার সহযোগিতা পেলে সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
অপরদিকে মুঠোফোনে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আহাম্মদ জানান, পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করলে রমনের প্রতিবন্ধী কার্ড প্রাপ্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।