সরকার যখন দেশব্যাপী বিনা মূল্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য কাজ করছে। ঠিক তখনই পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের দুটি গ্রামের ১২০টি পরিবার থেকে বাড়তি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পল্লি বিদ্যুৎ অফিসের দালালদের হাতে এ অর্থ দিতে না পারলে কারও ঘরে আলো জ্বলবে না। এমনিক যাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার সংযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তুলে নেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইলের কালিয়ার পুরুলিয়া ইউনিয়নের মধ্য পুরুলিয়া ও দাড়িপর পাড়ায় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ ১২০জন গ্রাহক নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেন। আবাসিক সংযোগের জন্য একজন গ্রাহক অফিসে জামানত বাবদ ৪০০ টাকা এবং সমিতির সদস্য বাবদ ৫০ টাকা দিলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি, সার্ভিস তার (১৩০ ফুটের মধ্যে) এবং মিটার গ্রাহকের বাড়ির আঙ্গিনায় বসিয়ে দেওয়া হবে। এরপর বাকি খরচ গ্রাহকের।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, চন্দ্রপুর গ্রামের রকিবুল ইসলাম ও চাচুড়ি এলাকার মিলনসহ কয়েকজন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে পুরুলিয়া মধ্যপাড়ার পলি বেগম, ফিরোজা বেগম, ইবাদুল শেখ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রুহুল কুদ্দুস, চান মোল্যা, খাজা মিয়া, লিটন শেখ, গফুর শেখ, জান্নু মোল্যা, সালামত শেখ, আকছির বাকা মিনা, দাড়িপর পাড়ার বাদল মোল্যা, সোহেল মোল্যা, সুরত গাজী, রবিউল ইসলাম, সাবু শেখসহ ১২০ পরিবারের প্রত্যেকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুরুলিয়া গ্রামের ভ্যান চালক ফেরদৌস গাজী বলেন, ‘আমার বাড়ি নির্দিষ্ট আয়ত্বের বাইরে দেখিয়ে রকিবুল বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সংযোগের জন্য ১২ হাজার টাকা অথবা খুঁটি বাদে ৬ হাজার টাকা দাবি করেছে। এ জন্য ১ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার বাড়িতে এখনো খুঁটি ও তার পৌঁছায়নি। গত ২৬ আগস্ট সকালে রকিবুলের কাছে গেলে সে বলেছে, ৬ হাজার টাকা ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না।’
পুরুলিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের শফিক মোল্যার স্ত্রী পলি বেগম জানান, স্থানীয় চন্দ্রপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছে। দাবিকৃত এ অর্থ দেয়নি বলে রকিবুল হুমকি দিয়েছে। বলেছে, তোমার বাড়ির পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার খুলে নেওয়া হবে, টাকা না দিলে ঘরে আলো জ্বলবে না। তিনি টাকা চাওয়ার এ বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের এক অফিসারকে (নাম বলতে পারেননি) ওই গ্রাম পরিদর্শনের সময় জানিয়েছেন।
একই গ্রামের বাবু কাজীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, তিনি নিজ হাতে দুটি মিটারের জন্য রকিবুলকে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন। রকিবুল আরও ৬ হাজার টাকা চেয়েছে।
একই গ্রামের ইবাদুল শেখ বলেন, ‘একটি মিটারের জন্য ৩ হাজার টাকা দিলেও এখনো তার সংযোগ দেওয়া হয়নি।’
দাড়িপর গ্রামের বাদল মোল্যা জানান, তিনি সুদে আড়াই হাজার টাকা এনে চাচুড়ি বাজারের মিলন নামে একজন ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীকে দিলেও তার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এখন স্থানীয় শুকুর মিয়া ও তুহিন বাকি টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে।
যশোর পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২, কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বাজার শাখার লাইন টেকনিশিয়ান মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে ভালো কিছু বলতে পারব না।’
এ ব্যাপারে রকিবুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজেকে পল্লী বিদ্যুত সমিতির ইলেকট্রিশিয়ান দাবি করে বলেন, ‘বাড়িতে ওয়ারিং করার জন্য ১৫ জনে এক হাজার টাকা করে নিচ্ছি। এর বাইরে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’
তবে দাড়িপর পাড়ায় অন্য লোক কিছু টাকা নিতে পারে বলেও জানান তিনি।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সাব জোনাল অফিসের এজিএম রুবেল হোসেন বলেন, ‘আবাসিক গ্রাহকের বাড়িতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার পৌঁছে দিতে সরকারিভাবে রশিদের মাধ্যমে জমা দিতে হবে ৪৫০ টাকা। এর বাইরে অফিসের আর কোনো খরচ নেই। বাকিটা ব্যক্তিগত। আমরা এসব বিষয়ে ধারণা দিতে বিভিন্ন সময় মিটিং ও উঠান বৈঠক করেছি। তারপরও কিভাবে মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে বুঝি না। এলাকার কেউ এ বিষয় নিয়ে কোনো অভিযোগও করেনি।’
চলতি বছরে কালিয়া উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে বলেও জানান তিনি।