কক্সবাজারের ১৫ হোটেল-মোটেলে রমরমা ইয়াবা কারবার!

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-09-01 04:13:58

সমুদ্রনগরী কক্সবাজার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন অঞ্চল। তবে কক্সবাজারের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে একটি নেতিবাচক বিষয়, যার নাম ইয়াবা। কক্সবাজারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ইয়াবা কারবার চলছে শহরের ১৫টি হোটেল-মোটেলেও। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতার মুখে আত্মগোপন করেছেন বেশির ভাগ ইয়াবা কারবারি। প্রকাশ্যে আসতে না পেরে গোপনে হোটেল-মোটেলে চলছে তাদের লেনদেন।

গোয়েন্দা বিভাগের একটি সূত্র বলছে, কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের আশপাশের এলাকার ওয়ার্ল্ড বিচ রির্সোট, জিনিয়া রিসোর্ট, আর এম গেস্ট হাউজ, আমারি রিসোর্ট, এ আর গেস্ট হাউজ, ক্লাসিক রিসোর্ট, জিনিয়া রিসোর্ট, সি আলিফ, সি-পার্ল রিসোর্ট-১ ও ২, কক্স হিলটন, সোহান রিসোর্ট, হোয়াইট বিচ রির্সোট, মিল্কি রিসোর্ট, এস কে কামাল রিসোর্টে চলে ইয়াবার কারবার।

এর মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে। কলাতলী মোড়ে অবস্থিত এ রিসোর্ট ১০ তলা বিশিষ্ট। রিসোর্টটিতে শতাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ৪০টি ফ্ল্যাটের ভাড়া নিয়েছেন টেকপাড়া এলাকার মো. ইউসূফের ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাহিনুল ইসলাম শাহিন (৩০)।


শাহিন ফ্ল্যাটগুলোতে নারী ও ইয়াবার ব্যবসা পরিচালনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। পাশাপাশি রয়েছে কলাতলী টিঅ্যান্ডটি পাহাড়ের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মইনুল ইসলাম (৩০)। মইনুলের রয়েছে ৫টি ফ্ল্যাট। সশস্ত্র অবস্থায় চলাচল করেন এই ইয়াবা ব্যবসায়ী। মাদক পাচারের সময় ব্যবহার হয় তার কাছে থাকা অন্তত ৫টি অস্ত্র।

রাত হলেই ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে বসে মইনুল ও শাহিনের ইয়াবা হাট। এ দুজনের নেতৃত্বে রিসোর্টটিতে আত্মগোপন করেছেন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এখানে চাহিদা মতো নারী সরবরাহসহ চলে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য।

গত ১৮ আগস্ট রাতে ওয়ার্ল্ড বিচ রির্সোটের ৬০৩ নম্বর রুম থেকে শহরের পাহাড়তলী এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. শফিককে (৩৪) আটক করে পুলিশ। এ সময় মো. রফিক (২৬) নামে তার এক সহযোগীকেও আটক করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইয়াবা লেনদেনের খবর পেয়ে পুলিশ ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ৬০৩ নম্বর কক্ষে অভিযান চালায়। এ সময় শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী শফিক ও তার সহযোগী রফিককে আটক করা হয়। ওই কক্ষ থেকে ইয়াবাও উদ্ধার করা হয়। তবে পুলিশের অভিযান টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী মধ্যম কলাতলী এলাকার রাসেল। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার।

এছাড়া সি আলিফ থেকে তরিকুল ইসলাম নামে যশোরের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছিল। যার কাছ থেকে ৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের একাধিক কর্মী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, মইনুলের মালিকানাধীন (ভাড়ায়) ফ্ল্যাটগুলোতে সব সময় ইয়াবা ব্যবসা ও পতিতাবৃত্তি চলে। মাঝে মধ্যে ইয়াবার লেনদেন নিয়ে অপহরণ, মারামারিসহ নানা ঘটনা ঘটে। মইনুলের কারণে পুরো হোটেলটি অপরাধের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/31/1567238274828.jpg

জানা গেছে, মইনুল হোসেনের বাড়ি মহেশখালী উপজেলায়। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার শহরে বসবাস করেন তিনি। টানা কয়েক বছর লাইট হাউজ এলাকার সানফ্লাওয়ার রিসোর্ট ও ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে চাকরি করেছেন মইনুল। হঠাৎ দেড় বছর আগে তার জীবনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন শুরু হয়। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। দেড় বছর আগেও যিনি সামান্য কর্মচারী ছিলেন তিনি বর্তমানে কোটি টাকার মালিক।

অন্যদিকে জিনিয়া রিসোর্টে চলছে বোরহান উদ্দিন নামে এক ইয়াবা গডফাদারের নিয়ন্ত্রণে। কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেও বেশির ভাগ ফ্ল্যাট নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এছাড়াও অন্য হোটেল-রির্সোটগুলোর অবস্থাও একই।

ওয়ার্ল্ড বিচ রির্সোটের অভিযুক্ত ভাড়াটে শাহিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয় আরেক অভিযুক্ত মইনুল হোসেনের সঙ্গে।

তিনি ফ্ল্যাট ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ অস্বীকার করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে তার মালিকানাধীন চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। শাহিনের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বেও কিছু ফ্ল্যাট আছে। সেগুলো পরিচালনা করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানান।

হঠাৎ উত্থানের কারণ জানতে চাইলে মইনুল হোসেন জানান, তাদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো। তিনি কখনো ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট অথবা অন্যকোনো হোটেল-মোটেলে চাকরি করেননি বলে দাবি করেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন খন্দকার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টে ডেভলপার, জমির মালিক, ফ্ল্যাট মালিক ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা আছে। এর সুযোগ নেয় চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। তারা ফ্ল্যাট ব্যবসার আড়ালে সেখানে ঢুকে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ওসি আরও বলেন, শুধু ওয়ার্ড বিচ নয়, আরও অর্ধশত হোটেল-মোটেল পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। অভিযানও জোরদার করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর