পাথরের রাজ্য নামে খ্যাত দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়। এ জেলার পাথর ও বালির চাহিদা আছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। পঞ্চগড়ের করতোয়া, ডাহুক, মহানন্দাসহ বিভিন্ন সমতল ভূমিতে বালি পাওয়া যায়। আর বালির নিচে ছড়িয়ে থাকে নুড়ি পাথর। এসব পাথর কুড়িয়ে আগামীর স্বপ্ন দেখেন স্থানীয় নারীরা।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় ইজারা নিয়ে করতোয়া নদী থেকে বালু তোলেন ব্যবসায়ীরা। এসব বালু সড়কের পাশে বা উঁচু জমিতে স্তূপ করে রাখা হয়। পরে ওই বালুর মধ্যে থেকে পাথর কুড়িয়ে টাকা উপার্জন করেন স্থানীয় নারীরা।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বালির পয়েন্টে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী নারীরা বালির মধ্য থেকে পাথর কুড়াচ্ছেন। তারা জানান, অবসর সময়ে তারা পাথর কুড়ানোর কাজ করেন এবং ওই আয় দিয়ে নিজেদের হাত খরচ মেটান। মাঝে মাঝে পরিবারের বিভিন্ন কাজে ওই অর্থ ব্যয় করেন তারা।
মহাজনরা তাদের কাছ থেকে প্রতি সেপ্টি পাথর কেনেন ৩০-৪০ টাকা দরে। একজন নারী প্রতিদিন ৪-৭ সেপ্টি পাথর কুড়াতে পারেন। তবে তাদের দাবি, অন্য জায়গায় এসব পাথর সেপ্টি প্রতি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু অন্য জায়গায় কেউ পাথর বিক্রি করলে তাদের পাথর কুড়াতে দেন না মহাজনরা। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি করেন ন্যায্য দাম দিয়েই তারা নারীদের কাছ থেকে পাথর কেনেন।
জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া এলাকার সুফিয়া খাতুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ, আমাদের কাজ করে খেতে হয়। তাই অভাবের তাড়নায় পাথর কুড়াতে এসেছি। পাথর কুড়িয়ে যা পাই তা সংসারে খরচ করতে হয়।'
একই কথা জানান তেঁতুলিয়া উপজেলার ময়নাগুড়ি এলাকার রমিছা বেগম। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'বালুর নিচে আমাদের স্বপ্ন লুকিয়ে আছে। সারাদিন পাথর কুড়িয়ে যা পাই তা দিয়ে নিজের হাত খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়।'
বালু ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আমরা ইজারাদারের ডাকের মাধ্যমে বালু তুলে সরবরাহ করি। নদী থেকে বালু উত্তোলনের পর এর মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথর কুড়িয়ে বিক্রি করেন অনেক নারী।'
তেঁতুলিয়া উপজেলা মাটি কাটা ও পাথর উত্তোলন সমিতির সভাপতি মুক্তারুল হক মুকু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'বালুর স্তূপ থেকে পাথর কুড়িয়ে অনেক নারী উপার্জন করেন। এতে তাদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আসে।'