নাটোরে চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং হত্যার বিচার দাবি

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-08-24 18:09:22

নাটোরে চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও হত্যার বিচার দাবি করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। শহীদরা হলেন- মজিবর রহমান রেজা, গোলাম রব্বানী রঞ্জু, সেলিম চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম বাবুল। প্রতি বছর ১ সেপ্টেম্বর ওই চার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরণ করেন নাটোরবাসী। পাশাপাশি দিনটিকে শোকের দিন হিসেবে পালন করেন। তবে এ দিনটির রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই।

জানা গেছে, একাত্তরের আজকের এই দিনে পাকসেনা এবং তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর বাহিনীর হাতে শহীদ হন মজিবর রহমান রেজা ও গোলাম রব্বানী রঞ্জু। অপর দুই শহীদের মধ্যে বাবুলকে পাকসেনারা ধরে নিয়ে ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল হত্যা করে এবং সেলিম চৌধুরী নওগাঁর রণাঙ্গনে ১ ডিসেম্বর শহীদ হন। এরপর থেকে প্রতিবছর ১ সেপ্টেম্বর চার শহীদকে স্মরণ করা হয়।

আরও জানা গেছে, একাত্তরে নাটোরের তৎকালীন ছাত্রলীগ ও সংগ্রাম পরিষদ নেতা মজিবর রহমান রেজা এবং গোলাম রব্বানী রঞ্জু ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকায় যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তবে পাকিস্তানি দোসরদের প্রতারণার শিকার হয়ে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর হাতে ধরা পরেন। পাকবাহিনী উপজেলার মশিন্দা এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর ১ সেপ্টেম্বর তাদের হত্যা করে। পরে তাদের মৃতদেহে পেরেক দিয়ে ছিদ্র করা ও সিগারেটের ছ্যাঁক দেওয়ার চিহ্ন পাওয়া যায়। অন্যদিকে, মৃতদেহ না পাওয়ায় শহীদ সেলিম ও বাবুলের কাপড় একই স্থানে সমাহিত করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ১ সেপ্টেম্বর তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

নাটোরে চার শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং হত্যার বিচার দাবি

এদিকে, তাদের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার হলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও বিচার পাননি স্বজনরা। ২০০৮ সালে চিহ্নিত ২৪ জন রাজাকার-আলবদরের বিরুদ্ধে মামলা করেন শহীদ মজিবর রহমান রেজার ভাই বিপ্লব হোসেন। কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। এছাড়া শহীদদের পরিবারের অসম্মতি ও বিরোধের কারণে তাদের স্মরণে শহীদ বেদী নির্মাণের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

শহীদ রেজাউন্নবীর ভাতিজা শাহরিয়ার হোসেন জানান, শুরুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা সংগঠন দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করত। কিন্তু এখন সে সংখ্যা কমে গেছে। তাই প্রতিবছর পারিবারিকভাবেই শহীদদের স্মরণ করা হয়।

শহীদ সেলিম চৌধুরীর ভাতিজা বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতেন। অথচ শহীদ হওয়ার পর তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিই জোটেনি। এমনকি জেলা প্রশাসনও তাদের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি পালন করেন না।

শহীদ রঞ্জুর ভাতিজা খালিদ বিন জালাল বাচ্চু জানান, সবাই আশা করে, সরকার চার শহীদের হত্যা মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।

শহীদ বাবুলের ছোট বোন রোকসানা পারভীন জানান, মুক্তিযোদ্ধা রেজা, রঞ্জু ও সেলিম শহীদের মর্যাদা পেলেও বাবুলকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়নি। এমনকি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তার পরিবার বঞ্চিত।

নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'নির্বাচিত হওয়ার পর চার শহীদের কবরস্থান এলাকায় অত্যাধুনিক স্মৃতি সৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু শহীদ পরিবারের বিরোধিতার কারণে তা ভেস্তে যায়। তবে আমি এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।'

এদিকে দিনটির স্মরণে শহরের কানইখালীস্থ চার শহীদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায় জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌর মেয়র উমা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মর্তুজা আলী বাবলু, ছাত্রলীগ সভাপতি রাকিবুল হাসান জেমস, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম, যুবলীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর