বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরও অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগে রিপন মিয়া নামের এক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুই বছর আগে নিজের নামে মামলা হলেও বিষয়টি জানতেন না রিপন। সম্প্রতি পুলিশ পরোয়ানা নিয়ে তাকে গ্রেফতার করতে অভিযান শুরু করে। এরপর মামলার বিষয়টি জানতে পারেন রিপন। বর্তমানে তিনি মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদালতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
রিপন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের চরহোসেনপুর গ্রামের একরাম হোসেনের ছেলে। তিনি নরসিংদীর একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। পিডিবি কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালে শেষের দিকে রিপন মিয়াকে আসামি করে ময়মনসিংহ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির বাদী হন বিদ্যুৎ বিভাগের শম্ভুগঞ্জ কার্যালয়ের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, রিপন মিয়া একজন বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহক। যার হিসাব নম্বর দেখানো হয়-৩০৬৫/৩১৬৪। ওই হিসাবের অনুকূলে সেপ্টেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত সর্বমোট ৩৯ হাজার ৮৬৯ টাকা বকেয়া থাকায় ২০ আগস্ট ২০১৭ সালে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে স্ব-উদ্যোগে সংযোগ নিয়ে ব্যবহার করায় ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ সরবরাহের অভিযানের সময় হাতেনাতে ধরা হয়। তাৎক্ষণিক সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। গ্রাহক অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় এক হাজার ৫০ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়। উদ্বুত পরিস্থিতিতে বিল আদায়সহ ক্ষতিপূরণ আদায়ের নিমিত্তে রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আইনের ৩৯ (ক) ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মামলাটি করা হয়।
এদিকে পরিবারের অভিযোগ রিপন মিয়ার নামে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগেও রিপনের নামে সংযোগের কোনো নথি নেই। তবে রিপনের মা আম্বিয়া খাতুনের নামে একটি সংযোগ রয়েছে। সংযোগটি আগে রিপনের বাবা একরাম হোসেনের নামে ছিল। কিন্তু চরহোসেনপুর গ্রামে পাশাপাশি দু’জন একরাম হোসেন হওয়ায় বিদ্যুৎ বিলের কাগজ নিয়ে জটিলার মধ্যে পড়তে হয়। তাই আম্বিয়া খাতুন নিজের নামে সংযোগটি স্থানান্তর করে নেন। তাদের কোনো মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়াও নেই।
রিপনের মা আম্বিয়া খাতুন জানান, ছেলের নামে বিদ্যুৎ বিভাগের মামলার খবর জেনে বিদ্যুৎ বিভাগ ও আদালতে দৌঁড়ঝাপ করে কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তার ছেলের নামে সংযোগ না নিলেও কিভাবে তার ছেলের নামে মামলা হয়েছে তার উত্তর পাচ্ছেন না কোথাও।
রিপনের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমীন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে মামলায় জড়িয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন। পুলিশের ভয়ে তিনি এখন বাড়িতে আসতে পারছেন না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ‘
এদিকে, গ্রেফতারের ভয়ে রিপন তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ রেখেছেন। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ (পিডিবি) আবাসিক প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রশান্ত ধর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টির সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীদের গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’