পাহাড়ে চাষ করা জুমের ফসল ঘরে তোলার আনন্দে বান্দরবানে থ্লাইথার (নবান্ন) উৎসবে মেতেছে বম জনগোষ্ঠীরা। জুমে উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা রকমের ফসল ঘরে তোলার খুশিতে পাহাড়ি পল্লীগুলোও সেজেছে যেন নতুন সাজে। বম অধ্যুষিত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে ধর্মীয় প্রার্থনা, ঐতিহ্যবাহী বম নৃত্য-গান এবং মজাদার সব খাবারের আয়োজন।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বান্দরবানের বালাঘাটায় বিটারিয়ান চার্চে ধর্মীয় সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সদরের লাইমি পাড়া, গেজমনি পাড়া, ফারুক পাড়াসহ বম অধ্যুষিত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নতুন বছরের জুমের ফসল ঘরে তোলার আনন্দে থ্লাইথার উৎসবে মেতে ওঠে পাহাড়ি বম জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা।
পাহাড়িরা জানান, বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে আগুন দেওয়া হয়। মে-জুন মাসের দিকে আগুনে পোড়ানো পাহাড়ে জুম চাষ শুরু করে বম জনগোষ্ঠীসহ জুমিয়া পরিবারগুলো। প্রায় ৩-৪ মাস পরিচর্যার পর বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পাহাড়ে উৎপাদিত জুমের ফসল গড়ে তোলা শুরু করে।
এদিকে, পাহাড়ে জুম ক্ষেতে উৎপাদিত জুমের নতুন ফসল তুলে আনার পর নতুন ধানে তৈরি ভাত, হরেক রকমের পিঠা, জুমের ভুট্টা, মরিচ, যব-সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টকপাতা, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এক সঙ্গে রেখে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রার্থনা করে বম জনগোষ্ঠীরা। প্রাথর্না শেষে উৎসবকে ঘিরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা এবং মজাদার সব খাওয়া-দাওয়া। বম জনগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা সাজে নিজস্ব পোশাকে। মেতে ওঠে থ্লাইথার উৎসবে। নিজেদের পছন্দের প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়। জুমে উৎপাদিত নতুন ফসল পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে বিতরণ করা হয়।
আয়োজক কমিটির সদস্য জাইয়ন লনচেও বলেন, ‘পাহাড়ে চাষ করা জুম ক্ষেতের নতুন ফসল ঘরে তোলার আনন্দে সামাজিক উৎসব নবান্ন পালন করা হয়। বম জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় এটি থ্লাইথার উৎসব নামে পরিচিত। এ উৎসবে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে জুমে উৎপাদিত ধান, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন জুম ফসল নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয়।’
বম জনগোষ্ঠীর নেতা জুমলিয়ান আমলাই বলেন, ‘পাহাড়ে করা জুমের ফসল গড়ে তোলার আনন্দে যুগযুগ ধরে থ্লাইথার উৎসবটি পালন করে আসছে বম জনগোষ্ঠীরা। মূলত হচ্ছে এটি নবান্ন উৎসব। এটি বম জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য-সংস্কৃতির একটি অংশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে নানা কারণে জুম চাষ পরিত্যাগ করে মিশ্র ফল চাষের দিকে ঝুঁকছে পাহাড়িরা। তারপরও এ উৎসবের আমেজ কমেনি। নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে প্রতিবছর জুমের ফসল ঘরে তোলার ব্যস্ত সময়ে নানা আয়োজনে বম সম্প্রদায় থ্লাইথার উৎসবটি পালন করে।’