৩২৭৫০ মানুষের বিপরীতে একজন চিকিৎসক!

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-08-20 16:07:28

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৩১ হাজার। এই জনসংখ্যার সেবায় স্থানীয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল, যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এতে প্রাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪টি পদ থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৪ জন। ফলে গড়ে ৩২ হাজার ৭৫০ জন মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক মাত্র একজন। চিকিৎসক-জনবল ও যন্ত্রপাতি সংকটের মধ্যেই মেডিকেল অফিসার নাজমুল হাসানকে সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বদলি করা হয়েছে। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৫৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। মোট ১৪টি পদের বিপরীতে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক সেবা প্রদান করছেন।

তারা হলেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেল, মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ ও মেডিকেল অফিসার নাজমুল ইসলাম। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আরও ৪ জন চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও বিভিন্ন কারণে তারা হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। তাদের মধ্যে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ইয়াসের আরাফাত ছয় বছর ও মেডিকেল অফিসার মোফাজ্জল শরিফ সাড়ে চার বছর ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দুটি পদে কাউকে নিয়োগ প্রদান করা যাচ্ছে না।

আর প্রেষণে (ডেপুটেশন) রয়েছেন গাইনি ও ডেন্টাল সার্জন পদের দুই চিকিৎসক। এনেসথেসিয়া পদটি দীর্ঘদিন ধরে খালি। শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো চিকিৎসক নেই। এছাড়াও ১৭টি স্বাস্থ্য সহকারীর পদের বিপরীতে রয়েছেন ১২ জন, ১৬ জন নার্সের বিপরীতে রয়েছেন ১৩ জন, অফিস সহকারীর ৩টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ ও টেকনিশিয়ানের দুইটি পদ শূন্য রয়েছে।

শিশু, চক্ষু এবং অর্থপেডিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালটিতে এক্স-রে মেশিন থাকলেও তা দুই বছর ধরে অকেজো। দুটি ইসিজি মেশিন থাকলেও সেগুলো ঠিকমতো কাজ করে না। এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে।

স্থানীয় সাইলকোনা গ্রামের ইদ্রীস আলী ও আব্দুস সালাম জানান, হাতেগোনা কিছু রোগের পরীক্ষা করা হয় এই হাসপাতালে। তবে এখানে জটিল কোনো রোগের পরীক্ষা করা হয় না।

দায়ারামপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসায় চিকিৎসকরা সময় দিতে পারেন না। কোনো রকমে সমস্যা শুনে ওষুধ লিখে দেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। চিকিৎসক সংকটের পরও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডা. নাজমুল ইসলামের বদলির আদেশ হয়েছে। এই বদলির আদেশ বাতিলের জন্য আবেদনও করা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। অচিরেই সংকট কেটে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর