বগুড়া জেলার ১২টি থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে গত এক বছরে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ মীমাংসার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের ব্যাপক সাফল্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। গ্রামের মানুষ এখন আর মাতব্বরদের কাছে না গিয়ে চলে আসছেন থানায়।
জানা গেছে, ১২ ধরনের অভিযোগ নিয়ে কাজ করে থাকে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক। এসবের মধ্যে যৌন হয়রানি, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা, গণধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক কলহ, অপহরণ, পরকীয়া এবং সাইবার ক্রাইম।
২০১৭ সালে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বগুড়ায় এ ধরনের অপরাধ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কাজ শুরু করে। শুরুতে তিনটি থানায় ইউএনএফপিএ'র নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়। বাকি ৯ থানার মানুষের কথা চিন্তা করে বগুড়ার পুলিশ সুপার নিজ উদ্যোগে সেখানে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করেন। এই হেল্প ডেস্কগুলোতে একজন করে নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
নারী হেল্প ডেস্কের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অভিযোগকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাম-পরিচয় এবং অভিযোগের বিষয়টি গোপন রেখে তাকে আইনগত সহযোগিতা করা হয়। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে একমাত্র বগুড়া জেলাতেই ১২টি থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক রয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ১২টি থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে ১৬৬৫টি অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১৪১৯টি অভিযোগ মীমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। ২২২টি অভিযোগ জিডি ভুক্ত করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এছাড়াও ৩০৪টি অভিযোগ আপোষ যোগ্য না হওয়ায় মামলা রেকর্ড করা হয়।
এক বছরে যে ১৬৬৫টি অভিযোগ নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে পাওয়া গেছে তার মধ্যে যৌন হয়রানি ১৪২টি, যৌতুক ২৬৯টি, বাল্যবিয়ে ৩৭টি, ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা ১৫৮টি, গণধর্ষণ ৮টি, শারীরিক নির্যাতন ৭২৫টি, মানসিক নির্যাতন ৩৫৮টি, পারিবারিক কলহ ৫০০টি, অপহরণ ১৩৮টি, প্রেম ও পরকীয়া জনিত ৮৪টি, শিশু পালিয়ে যাওয়া ৪১টি এবং সাইবার অপরাধ ৩০টি।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল বগুড়া জেলা প্রতিনিধি তামিমা নাসরিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ২০১৭ সাল থেকে বগুড়ায় কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এখন ১০৫ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় বাল্য বিয়ে, যৌতুক, ইভটিজিংসহ নানা ধরনের সামাজিক অপরাধের খবর পেলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করবেন।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পাওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার অভিযোগ মীমাংসার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়াতে জেলার দুর্গম এলাকাতে গত এক বছরে ১৪৮টি সভা করা হয়েছে। এই সভার মধ্য দিয়ে ৩০ হাজার ২০০ জনকে সচেতন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে এমন অনেক অভিযোগ এসেছে যে অভিযোগকারীর অভিযোগ তার অভিভাবককে না জানিয়ে সমাধান করে দিয়ে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।