পার্বত্য জনপদে পাহাড়ে শোভা পাচ্ছে এখন জুমের পাকা ধান। বাতাসে দুলছে সোনালি রঙের পাকা ধানের শীষ। জুম ক্ষেতে উৎপাদিত পাকা ধানের গন্ধ ছড়াচ্ছে বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদগুলোতে। শিশু, কিশোর এবং তাদের বাবা-মা কেউই বসে নেই ঘরে। জুমে উৎপাদিত ধান কাটতে সকলে নেমেছে পাহাড়ের জুম ক্ষেতে। ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে এখন জুমিয়া পরিবারগুলো।
এদিকে ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে ব্যাপক। এ বছর সেখানে আশানুরূপ ভালো ফলন হয়েছে।
জানা গেছে, বান্দরবানে বসবাসরত ম্রো, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমী, লুসাই, চাকমা, পাংখো, বম, চাকসহ ১১টি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকাংশরাই জুম চাষের উপর নির্ভরশীল।
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছর বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর পাহাড়ি জমিতে জুম চাষ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার জুম চাষ বেড়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন।
স্থানীয় ম্রো সম্প্রদায়ের লেখক ও গবেষক সিইয়ং বলেন, জুম চাষ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি আদি চাষাবাদ পদ্ধতি। এটি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ক্ষতিকারক হলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ঐতিহ্যের অংশ। জুমিয়া পরিবারগুলো পাহাড়ে ধানের পাশাপাশি ভুট্টা, মরিচ, যব-সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, মারফা, টকপাতাসহ বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে। জুমের ফসল ঘরে তোলার সময় পাহাড়ি পল্লীগুলোতে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নবান্ন উৎসবেরও আয়োজন করা হয়।
জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ভবতোষ চক্রবর্তী জানান, কয়েক বছর ধরে জেলায় প্রতিবছরই জুমের চাষ বাড়ছে। এ বছর জুমের ভালো ফলন হয়েছে। জুমের ধানসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জুমিয়া পরিবারগুলো। জুম চাষ থেকে জুমিয়ারা সারা বছরের খাদ্য সংরক্ষণ করে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বান্দরবানের উপ-পরিচালক একেএম নাজমুল হক জানান, জুমে উৎপাদিত ফসল এই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু আদি পদ্ধতিতে জুম চাষের কারণে পাহাড়ে ক্ষয় সৃষ্টি এবং জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে।