টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ছিটমহলবাসীদের অর্থসম্পদ। এর পেছনে কাজ করছে বিশেষ একটি চক্র। এমনই অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহলে।
জানা গেছে, উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের খাসবাস দ্বারিকামারী বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় ২০১৮ সালের মে মাসে পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী পরিদর্শক মোসলেম উদ্দিন ‘কুমুর উদ্দিন মাছিরনবাড়ী' নামে বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় অত্র এলাকার জবেদ আলী নামের এক ব্যক্তির মেয়েকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ৩৩ শতক জমি স্কুলের নামে স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করে নেন। একই সঙ্গে ২০১১ সালের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ফাইল তৈরি বাবদ আরও দুই লাখ টাকা নেন। এর কিছুদিন পর অন্যপ্রার্থী ঠিক করে জবেদ আলীর মেয়ের নাম শিক্ষকের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে বিদ্যালয় স্থাপনের জমি ছেড়ে দিলেও নগদ নেওয়া দুই লাখ টাকা ফেরত দেননি মোসলেম উদ্দিন। টাকা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে জবেদ আলী ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন। তবে এ ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোসলেম উদ্দিন।
উপজেলার বিভিন্ন বিলুপ্ত ছিটমহল ঘুরে দেখা গেছে, ৮নং ভোটবাড়ী আজিজুল নগর, ১৪নং মৌলভী খিদির বক্স, ১৪নং লতামারী তরিমল, ২১নং পানিশালা ছলেমান কবিরন নগর, ২৩নং খাসবাস দ্বারিকামারী কুমুর উদ্দিন মছিরন বাড়ী, ১১৯নং বাঁশকাটা, ১৩২নং বাঁশকাটা তাতিপাড়া বঙ্গবন্ধু, ফুলজান রহিম উদ্দিনটারী, আলিমজামুর বাড়ি ও বিমলা গোপালবাড়ী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে সাইনবোর্ড টানিয়ে স্থাপিত দেখানো হয়েছে।
উল্লেখিত বিদ্যালয়গুলোর দু-একটিতে ৮/১০ জন শিক্ষার্থী দেখা গেলেও অন্যগুলোতে কোনো শিক্ষার্থী নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, বাঁশকাটা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিব্য নাথের নেতৃত্বে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়গুলো সরকারি করণের কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে দিব্য নাথ বলেন, ‘আমি বিলুপ্ত ছিটমহলে স্থাপিত দশটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং স্কুলগুলোর নেতৃত্ব দেই।’
তবে বিলুপ্ত ছিটমহলে স্থাপিত বিদ্যালয়গুলোর কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন পাটগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষাকর্মকর্তা (ডিপিও) মো. গোলাম নবী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বলেন, ‘এভাবে বিদ্যালয় স্থাপন প্রতারণা করা ও ভবন দখল সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’