প্রতিপক্ষের দখলে নাটোরের অর্ধশতবছরের মিষ্টান্ন ভান্ডার বন্ধ

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-08-26 10:31:48

নাটোর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিমতলায় (বর্তমান ট্রাফিক মোড়) অবস্থিত অর্ধশত বছরের পুরনো 'আদি নিমতলা দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার' বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আদালতে একটি মামলা থাকা সত্ত্বেও দিন-দুপুরে জিনিসপত্র সরিয়ে পাকা দেয়াল তুলে দখলে নেওয়া হয় ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টির দোকানটি। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তবে এই দখলকে কেন্দ্র করে দখলদার মোহাম্মদ এরশাদের পক্ষে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা তৎপর ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিষ্টান্ন ভান্ডারটির মালিক দুলাল পাল সাংবাদিকদের জানান, দোকান ও আশেপাশের ১৩ শতাংশ ৬৭ লিং জমির মালিক তিনি ও তার সহদর ননী গোপাল পাল। অর্ধেকের ওপর তার নিজের দোকান ও বসতবাড়ি রয়েছে। বাকি অর্ধেক তার ভাই ভোগদখল করতেন। দখল সংক্রান্ত ঝামেলা থাকায় তিনি ভাই ননী গোপালের বিরুদ্ধে আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেন। আদালত মামলায় স্থিতাবস্থার জারি করলেও ননী গোপাল তার অংশটুকু জনৈক প্রবাসী মোহাম্মদ এরশাদসহ তিনজনের কাছে বিক্রি করে দেন। সে অনুযায়ী তারা জমির পূর্ব-পশ্চিম লম্বা করে দখল নেন। পরে তার দোকানটিও দখল করে নেওয়ার হুমকি দেন।

দুলাল পাল আরও জানান, হঠাৎ করে শনিবার আমাকে নাটোর পৌরসভায় ডাকা হয় দখল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমরা পৌরসভার মেয়রকে বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির আবেদন জানিয়েছি। তবুও আমার ছোট ছেলেকে পৌরসভার ভেতরে ডেকে নিয়ে সমঝোতার কথা বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। ওইদিন দুপুরের পর মোহাম্মদ এরশাদসহ শতাধিক লোকজন মিষ্টান্ন ভান্ডারে গিয়ে দোকানের মালামাল সরিয়ে ফেলেন এবং তড়িঘড়ি করে ইট বালু এনে দোকানের ভেতর পাকা দেয়াল নির্মাণ করে দোকানটি বন্ধ করে দেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের এক নারী সদস্য জানান, দোকানটি দখল করে নেওয়ায় তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তারা চেয়েছিলেন আদালতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান। আদালতের রায় তাদের বিপক্ষে গেলে তারা আর আপিল করতেন না।

নিমতলার একাধিক মিষ্টি ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ে প্রতিযোগিতা থাকলেও আদি নিমতলা মিষ্টান্ন ভান্ডার নাটোরের মিষ্টি ব্যবসার ইতিহাসের একটি অংশ। অর্ধশতবছরের এই মিষ্টির দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি।' 

দখলের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্তজা আলী বাবলু জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিষয়টি জানার জন্য। এ ব্যাপারে তার বা দলের কারো কোনো আগ্রহ ছিল না।

এদিকে, দখলদার মোহাম্মদ এরশাদের দাবি, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের ভাইয়ের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। ফলে দখল নয়, কেনা জমি বুঝে নিয়েছেন।

তবে দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে 'সমঝোতার' মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে দাবি করেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী। তিনি বলেন, 'মোহাম্মদ এরশাদ টাকা দিয়ে ১০ বছর আগে জমি কিনেছেন। তিনি পৌরসভার কাছে দখল বুঝে নেওয়ার আবেদন করলে মানবিক কারণে উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।

আদালতের স্থগিতাদেশ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, 'বিবাদমান এক পক্ষ জমি বিক্রি করলে আর কিছু করার থাকে না।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর