মানিকগঞ্জের জেলা হাসপাতালে জনবল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অভিযোগ আছে, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও জনবল আছে একশো শয্যার। ফলে সেবা নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালে গাইনি এবং শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ লাইনে বেশি ভিড়। প্রায় একই অবস্থা অন্যান্য চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে রোগীদের। তবে সাধারণ রোগীরা অপেক্ষায় থেকে সেবা নিতে পারলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে জরুরি রোগীদের।
জানা গেছে, প্রতিদিন এক হাজারেরও বেশি রোগী আসেন হাসপাতালের বহির্বিভাগে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নির্ধারিত বেড বা কেবিন না পেয়ে হাসপাতালের ফ্লোর ও বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিতে নিচ্ছে অনেক রোগীর। হাসপাতালের ফ্লোর ও বারান্দার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
মানিকগঞ্জ শহরের পোড়রা এলাকার বাসিন্দা সালমা বেগম জানান, অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে দুই দিন ধরে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। কোনো বেড বা কেবিন না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র একটি বেডশিট দেওয়া হয়েছে। বিছানার চাদরটিও আনতে হয়েছে বাড়ি থেকে। বারান্দার ফ্যানটি নষ্ট থাকায় প্রচণ্ড গরমে কষ্ট হচ্ছে।
হযরত আলী নামের এক যুবক জানান, ভর্তি রোগীদের দেখতে অল্প সময়ের জন্য রাউন্ডে আসেন ডাক্তাররা। তারপর আরও কেউ খোঁজ নেন না। নার্সদের ডাকলে তারাও রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। তাছাড়া হাসপাতালের বাথরুমগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
মফেজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, ডাক্তার দেখাতে টিকিট কেটে তিনদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলেও ডাক্তারের দেখা পাননি তিনি।
জেলা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালে মানিকগঞ্জ জেলা শহরে স্থাপিত হয় ৫০ শয্যার হাসপাতাল। এরপর ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যা ও ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ২৫০ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। এরপর তিন বছর পার হয়ে গেলেও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ এরফান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘কাগজে কলমে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে একশো শয্যার। ফলে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’