অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে সম্পদ নেই

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মেহেরপুর | 2023-08-25 04:41:17

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) আক্রান্ত গবাদিপশু থেকে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। গবাদিপশু পালনে উদীয়মান এলাকা হিসেবে জেলার পরিচিতি বাড়লেও অ্যানথ্রাক্সে তা ম্লান হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে সম্পদ নেই।জনবল সংকটের কারণে অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চরম বিপাকে পশু-প্রাণী চিকিৎসার সরকারি একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটি।

প্রাণি সম্পদ বিভাগ বলছে, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হলে গবাদিপশু দ্রুত মারা যেতে পারে। চিকিৎসার সময় দেয় না। এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে প্রতিষেধক টিকা। নিয়মিত টিকা প্রদান করা গেলে অ্যানথ্রাক্স থেকে গবাদিপশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ভেটেরিনারি সার্জন (ভিএস) পদ একটি ও উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (এস.এ.এল.ও) ৪টি পদ শূন্য। ভেটেরিনারি সার্জন এবং এসএলএও পদধারীরা গবাদিপশুর চিকিৎসা এবং মাঠ পর্যায়ের তদারকির মূল কাজটি সম্পাদন করে থাকেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫২২ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিনই এ উপজেলার কোনো কোনো গ্রাম থেকে নতুন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। 

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে একজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, অফিস সহকারী একজন ও একজন ড্রেসার রয়েছেন। যাদের পক্ষে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আসা গবাদিপশুর চিকিৎসা দেওয়ায় সম্ভব নয়। মাঠ পর্যায়ে পশু চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম যাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়। জনবল সংকটে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে চলতি বছরে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামের গবাদিপশুর শরীরে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়েছে। গবাদিপশু মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলও প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

গাংনী উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় দুই লাখ গবাদি পশু রয়েছে। দরিদ্র কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গরু-ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ফলে প্রাণি স্বাস্থ্যের বিষয়টি এ অঞ্চলে এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: বিডি দাস বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস নাড়াচাড়ার মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে অ্যানথ্রাক্সে। আক্রান্তদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ঘা হচ্ছে। হাসপাতালে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত এ এলাকায় আক্রান্তের বিষয়টি নরমাল পর্যায়ে রয়েছে। তবে গবাদিপশুর অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা থেকে যায়।

বিভিন্ন গ্রামে গরু-ছাগলপালনকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অ্যানথ্রাক্স বা তড়কা সম্পর্কে বেশিরভাগ চাষির ধারণা নেই। তাই প্রতিষেধক টিকা প্রদানের ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ নেই। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে গিয়ে গবাদিপশুর টিকা প্রদান করানোও তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মোস্তফা জামান বলেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে বর্তমানে টিকা প্রদান কার্যক্রম চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ঝিনাইদহ জেলা থেকে চারজন এসএলএও কয়েকদিনের জন্য এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে টিকা প্রদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে জনবল সংকটে অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর