অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম ৯ বছরের শিশু নান্নু মন্ডলের। দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও তার স্বপ্ন লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হওয়ার। বড় হয়ে একটি চাকরি করে মা-বাবার দু:খ-কষ্টকে দূর করার। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছে। যেখানে একমুঠো ভাতের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে তার পরিবারকে সেখানে লেখাপড়া করা তার কাছে দুঃস্বপ্নের।
তারপরও হাল ছাড়তে নারাজ স্বপ্নবাজ নান্নু। স্কুলে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে যখনই সময় পায় তখনই ২০-৩০টি বই বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ছুটে চলে ক্রেতার উদ্দেশ্যে। নান্নু রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ার ৬ নং ফেরি ঘাটের ছাত্তার মেম্বার পাড়ার আলম মন্ডলের ছেলে। সে চানখানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে কথা হয় নান্নুর সাথে। নান্নু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলে, ‘আমার অনেক স্বপ্ন। আমি লেখাপড়া করে বড় হয়ে ভালো একটি চাকরি করতে চায়। আমার বাবা মাটি কাটার কাজ করে যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের সংসার চলেনা। মাঝে আমার স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন আমি অনেক কান্না করলে আমার মা আমাকে আবার স্কুলে যেতে দিয়েছে।
নান্নু আরো বলে, সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করার জন্য আমি স্কুল ছুটির শেষে বিকালে এবং স্কুল বন্ধের সময় সারাদিন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে বই বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন আমার প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বই বিক্রি হয়। বই বিক্রির টাকা আমি সব মায়ের কাছে দেয়।
বই ক্রেতা গোলাম মোর্তবা রিজু ও সবুজ শিকদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এই বয়সে এই শিশুটির আনন্দ করে বেড়ানোর কথা। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে আজ সে অর্থের জন্য বই বিক্রি করে বেড়াচ্ছে। আমরা এই শিশুটির কাছ থেকে কয়েকটি ধর্মীয়মূলক বই কিনলাম।
রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমিন করিমী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, শিশুটি স্কুল বন্ধের সময় বই বিক্রি করছে এটা ভালো দিক। মানুষও তো বই কিনছে। শিশুটির জন্য ঝুঁকি কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ঝুঁকি হবে কেন? এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায়না। সে তো ভারি কোন কাজ করছেনা। তাছাড়া সে স্কুল ফাঁকি দিয়েও বই বিক্রি করছেনা।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোবাশ্বের হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, যে জায়গায় শিশুটি ফেরী করে বই বিক্রি করছে সেটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বই বিক্রি করতে চাইলে তাকে অন্যভাবে করা উচিত। তবে শিশু শ্রম আইনে কোন শিশুকে দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো যাবেনা।
এসময় তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে এ সকল শিশুদের উপবৃত্তি দিচ্ছেন। আপনি আমাকে ঐ শিশুটির বিস্তারিত তথ্য দিন আমি ওকে উপবৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।