টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে গেল বন্যার আগে ব্যাপক ভাঙনে শতশত পরিবার গৃহহীন হয়েছেন। তবে সম্প্রতি আবারও যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের পুরাতন জনপদে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ে বসবাসরত লোকজন। অন্যদিকে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গেল বন্যায় যমুনার ভাঙনে চার ইউনিয়নের মানুষ বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন অবস্থায় জীবন-যাপন করছেন। নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও বালু উত্তোলন করায় যমুনা নদী পূর্বদিকে ধাবিত হচ্ছে। এতে নদীর পশ্চিমপাড়ে বিশাল চর জেগে উঠলেও নদীর পূর্বপাড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই পূর্বপাড়ের পুরাতন জনপথ ভেঙে যমুনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। অব্যাহতভাবে ভাঙনের ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি। অন্যদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ড্রেজার, বলগেটসহ বিভিন্ন যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ি হতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব সেনানিবাস পর্যন্ত এলাকাজুড়ে প্রায় ১৮-২০টি অবৈধ বালুর ঘাট তৈরি করেছেন রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা। নদী থেকে বালু উত্তোলন করে এসব ঘাট থেকে ট্রাকযোগে বিভিন্ন প্রান্তে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু-ভূঞাপুর সড়কের পাশে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের একাধিক পুকুর ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
অভিযোগ আছে, এসব রাস্তা তৈরিতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের। এসব ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রাক প্রতি কমিশন পান স্থানীয় প্রভাবশালী ও প্রশাসনের লোকজন।
এদিকে যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়াসহ গাবসারা, নিকরাইল ও অজুর্না ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে। যদিও খানুরবাড়িতে বালুর পরিবর্তে মাটিভর্তি করে নিম্নমানের জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে কাজ করছে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ড। জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজে ক্ষমতাশীলরা জড়িত থাকায় স্থানীয়রা কোনও প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। এছাড়া যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ফেলানোর কাজ করছে সেখানেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলগেট মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এতে জিওব্যাগসহ ভেঙে যাচ্ছে যমুনা নদীর পাড়।
খানুরবাড়ি গ্রামের মহির উদ্দিন আকন্দ, আবুল হোসেন মিয়া, খালেদা বেওয়া জানান, যারা যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করেন। তারা এলাকার প্রভাবশালী ও ভয়ঙ্কর লোক। বাপ-দাদার ভিটেমাটি যমুনার গর্ভে চলে গেলেও এদের (ক্ষমতাশীল) বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। বললে হত্যা করা হবে। জীবনের মায়া সবারই আছে, তাই কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন না।
টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. শামীম মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ভাঙন রোধে খানুরবাড়ি এলাকার যমুনা নদীতে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বালু উত্তোলণের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বালু উত্তোলনের মেশিন সরানো হয়নি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝোটন চন্দ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসন থেকে জিরোটলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। খানুরবাড়ি এলাকার যমুনা নদীতে বসানো বালুর উত্তোলনের মেশিন সরানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি যমুনা নদীতে অভিযান চালিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।’