একজন শিক্ষক চালাচ্ছেন স্কুলটি!

বরগুনা, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-09-01 22:17:56

তালতলী উপজেলার কাজিরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালাচ্ছেন মাত্র একজন শিক্ষক। তিনি কোনোভাবে টিকিয়ে রেখেছেন সব শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। অনেক সময় ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে ২য় শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন তো দূরের কথা, নামমাত্র শিক্ষাও পাচ্ছে না এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন বলছেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল ক্লাস করাচ্ছেন ২য় শ্রেণিতে। এই ক্লাস শেষ করে তাকে পড়াতে হবে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। কারণ বিদ্যালয়টিতে ৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক। তবে তিনিও নিয়মিত স্কুলে আসেন না। তাই দীর্ঘদিন ধরে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই পাঠদানের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছেন এ বিদ্যালয়টিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজিরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নের কাজিরখাল গ্রামে অবস্থিত। গত দেড় বছরের ধরে বিদ্যালয়ে রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষক। আর স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৯ জন। স্কুল ভবনটি বেশ সুন্দর। সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নকশায় নির্মিত স্কুলটির শ্রেণি কক্ষগুলো বেশ সাজানো। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়টিতে সবই আছে, শুধু নেই শিক্ষক। শিক্ষক সংকট এ বিদ্যালয়ের একটি মারাত্মক সমস্যা। উপজেলা সদর থেকে তুলনামূলকভাবে দুর্গম এলাকায় স্কুল হওয়ায় কোনো শিক্ষকই এখানে বেশিদিন থাকেন না। এ কারণে শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় অভিভাবকদের। শিক্ষার গুণগতমান অর্জন তো দূরের কথা নামের শিক্ষা পায় না এখানকার শিক্ষার্থীরা।

স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবেল, সাথী, স্বপ্না, মুক্তা ও বেল্লালসহ বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা জানায়, স্যার যখন এক ক্লাসে পাঠদান করান তখন অন্য ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের বসে থাকতে হয়। স্যার একা প্রতিদিন সব ক্লাস নিতে পারেন না।

কাজিরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
কাজিরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তালতলী উপজেলার বড় বগী ইউনিয়নের কাজিরখাল গ্রামে অবস্থিত, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সারমিনের মা পারুল বেগম বলেন, স্কুলে শিক্ষক নেই। তাই মেয়ের পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। অন্য স্কুল দূর হওয়ায় সেখানে দেওয়াও সম্ভব না। দেড় বছর ধরে শুনছি নতুন শিক্ষক আসবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক আসে নাই। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠদান ছাড়াও সব রকমের দাপ্তরিক কাজও তাকে করতে হয়। তিনি আরও বলেন আমার একার পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসম্মত শিক্ষ দেওয়া সম্ভব না। অনেক সময় শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও পাঠদান করাতে হয়।

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এম এম মিজানুর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কথা আমার জানা আছে। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ায় অল্পদিনের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর