নরসিংদীর পলাশে পুলিশের নির্যাতনে শেরখান মিয়া (২৩) নামে এক যুবক মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে।
নিহত শেরখান পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের পাঁচভাগ এলাকার খোরশেদ আলমের ছেলে। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পলাশ উপজেলার বরাব বাজার থেকে গাঁজা সেবনের অভিযোগে তাকে আটক করে পুলিশ।
নিহত শেরখানের বড় ভাই ফারুক মিয়া জানান, রোববার সন্ধ্যায় পলাশ থানার পলাশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইফতেখার, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মনজুরুল আলম ও রুবেল, কনস্টেবল দেলোয়ার, মানিকসহ ছয়জনের একদল পুলিশ বরাব বাজার থেকে শেরখানকে আটক করে। পুলিশ তাকে মোটরসাইকেলে করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় শেরখান লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে এবং ক্ষিপ্ত হয়ে বেদম মারধর করে। রাতে পরিবারের লোকজন থানায় গেলে শেরখানের কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ। এ সময় পরিবারের সদস্যরা শেরখানকে থানা হাজতে পড়ে থাকতে দেখেন। এর কারণ জানতে চাইলে দায়িত্বরত কনস্টেবল জানান, শেরখান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে, এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন। সেই রাতে শেরখানের জ্ঞান না ফেরায় পরিবারের লোকজন কান্নাকাটি শুরু করলে পুলিশ তাদের থানা থেকে বের করে দেয়। সোমবার সকালে শেরখানকে অচেতন অবস্থায় পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পরিবারের লোকজনও সঙ্গে ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠান। নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে শেরখানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে তিনি মারা যান।
ফারুক মিয়া আরও জানান, তারা সাদা কাগজে স্বাক্ষর না দেওয়ায় ঢাকা মেডিকেল থেকে শেরখানের মরদেহ হস্তান্তর করেনি। শেরখান মাছের ব্যবসা করতেন, তবে পাঁচ বছর আগে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে একটি ডাকাতি মামলায় জড়িয়েছিল, সেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পথে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। পুলিশের বেদম মরধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ হত্যার ঘটনায় তারা মামলা দায়ের করবেন।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ আমিরুল হক শামীম দায়িত্বরত চিকিৎসক রোজি সরকারের বরাত দিয়ে জানান, শেরখানের শরীরে কোনও আঘাতের আলামত পাওয়া যায়নি। এ সময় তার জ্ঞান থাকলেও তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
শেরখান চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও তার বিরুদ্ধে তিনটি ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে দাবি করে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গ্রেফতারের পর মোটরসাইকেল থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিলেন শেরখান। এ সময় আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। আহতাবস্থায় প্রথমে শেরখানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে আবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পলাশ হাসপাতাল ও পরে নরসিংদী সদর থেকে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তাকে মারধর করা হয়নি।