হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী ৩ অক্টোবর পঞ্চমী থেকে শুরু হবে দুর্গাপূজা। ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ উৎসব।
প্রতিবারই কোনও না কোনও বাহনে মর্ত্যে আগমন ও মর্ত্য থেকে গমন হয় দেবী দুর্গার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবছর দেবী দুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চেপে। পঞ্জিকা মতে ঘোটকেই আবার গমন হবে দেবীর। ইতোমধ্যে পূজার জন্য সকল পূজামণ্ডপে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে পূজা উদযাপিত হবে।
দুর্গাপূজার আয়োজনে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় এবছর চার হাজার ৯৭০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগ ছাড়িয়ে দেশের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ হচ্ছে বাগেরহাট জেলার চুলকাঠি বাজারের পাশে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে।
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবার খুলনা জেলায় সর্বোচ্চ ৯৯৮টি পূজামণ্ডপ, যশোরে ৬৭৮টি, মাগুরায় ৬৫৩টি বাগেরহাটে ৬৪১টি এবং নড়াইলে ৫৮২টি, সাতক্ষীরায় ৫৭৮টি, ঝিনাইদহে ৪৩৫টি, কুষ্টিয়ায় ২৪৬টি, চুয়াডাঙ্গায় ১১৭টি এবং মেহেরপুরে ৪২টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২০১৮ সালে খুলনা বিভাগে চার হাজার ৮৪১টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ এ বছর ১২৯টি বেশি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ পূজামণ্ডপ হচ্ছে বাগেরহাটে। বাগেরহাট জেলার চুলকাঠি বাজারের পাশে হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এবার ৮০১ টি প্রতিমা সজ্জিত হচ্ছে এখানে। কারিগররা রাতদিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। মাটির কাজ শেষ করে কারিগররা প্রতিমায় রং তুলি ও সাজসজ্জার কাজ শুরু করেছেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ ও মহাভারতের চার যুগের দেবদেবীর নানা কাহিনী অবলম্বনে হিন্দু ধর্মের হাজার বছরের পুরাতন পৌরাণিক কাহিনীকে প্রাধান্য দিয়ে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি ভারত থেকেও এ পূজামণ্ডপ দেখতে আসেন অনেক দর্শনার্থীরা।
পূজামণ্ডপের প্রধান ভাস্কর খুলনার কয়রা উপজেলার হাতিয়ার ডাঙ্গা গ্রামের শিল্পী বিজয় কৃষ্ণ বাছার বার্তাটোয়েন্টিফোর. কমকে জানান, গত বৈশাখ মাস থেকে ১৫ জন প্রতিমা শিল্পীসহ পূজামণ্ডপের কাজ শুরু করেছি। ৬ মাস ধরে এ মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। দর্শণার্থীদের জন্য প্রতিবছরই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। এ বছর পানির উপর দেবদেবীর নৌকা বিলাস দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ, এখন চলছে রঙ আর সাজসজ্জার কাজ।
২০১০ সাল থেকে বাগেরহাটের এ অঞ্চলে বৃহৎ আয়োজনে দুর্গাপূজাটি অনুষ্ঠিত হয় ব্যক্তি উদ্যোগে। বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়ি। গত ৯ বছর ধরে লিটন শিকদার নামে এক ব্যবসায়ী মহা ধূমধামে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন।
এছাড়া ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, সৌহার্দ্য, শান্তিপূর্ণভাবে ও আনন্দমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানের লক্ষে পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন, স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবাপ্রদান, নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা, প্রয়োজনে সিসি টিভি স্থাপন, উচ্চস্বরে শব্দযন্ত্র ব্যবহার না করাসহ প্রতিমা বিসর্জনের সময় নির্ধারণ (রাত আটটার মধ্যে) করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।