কয়েকদিনে পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙনের শিকার চরাঞ্চলের শতাধিক বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙনের মুখে রয়েছে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের বাতিঘর নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। ২/১ দিনের মধ্য পদ্মার মুখে চলে যাবে বিদ্যালয়টিও।
এ বিদ্যালয়ে প্রায় ৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে। ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টির সকল মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যালয়টির পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে এলাকার ছোট ছোট শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিবচর উপজেলার দূর্গম চরাঞ্চলের নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দিতে অবস্থিত বিদ্যালয়টি পদ্মা নদীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। যেকোন মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি।
জানা যায়, ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস. ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির কারণে শিবচর উপজেলার মমিন উদ্দিন হাওলাদারকান্দি, জব্বার আলী মুন্সীকান্দি, বজলু মোড়লের কান্দি, মিয়া আজম বেপারীর কান্দি, রহমত হাজীর কান্দি, জয়েন উদ্দিন শেখ কান্দি, মসত খাঁর কান্দিসহ প্রায় ২৪ টি গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে।
বিদ্যালয়টির কারণেই চরের ওই সকল গ্রামে পৌঁছে গেছে শিক্ষা। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে চরে বসবাসরত পরিবারগুলো। এক সময়ে নদীতে মাছ ধরতে পাঠানো, চাষাবাদের কাজে লাগানো বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়া শিশু-কিশোরদের শৈশব কাটছে বিদ্যালয়ে।
পরিবারগুলোও ছেলেমেয়েদেরকে পাঠাচ্ছে স্কুলে লেখাপড়া শিখতে। ফলে দিন দিন দূর্গম চরাঞ্চলে বাড়ছে শিক্ষিতের হারও। মাধ্যমিক শেষ করে চরের ছেলে মেয়েরা এখন উপজেলা শহরে গিয়ে কলেজেও লেখাপড়া করছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও লেখাপড়া করছে । বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে গেলে শিক্ষার্থীদের খুব সমস্যায় পড়তে হবে বলে স্থানীয়রা জানান ।
এলাকার তরুণ সমাজসেবক রওশাদ এ হাওলাদার বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই চরের বাসিন্দা। বিদ্যালয়টি হওয়ার ফলে চরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছিল। এমনিতেই আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করতে চায় না, স্কুল পাশে ছিল তাই সন্তানদের একটু আগ্রহ ছিল।
রফিক খান নামের একজন বলেন, এই চরে যখন স্কুল ছিল না, তখন চর পাড়ি দিয়ে দূরে গিয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না এ এলাকার ছেলে-মেয়েদের। এখন ঘরের কাছে স্কুল হওয়ায় লেখাপড়া করার সুযোগ ছিলো। তবে ভাঙনে বিদ্যালটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে ছেলে-মেয়েরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন জানান, ‘স্কুলটি ঠিক পেছনেই পদ্মা নদী। পদ্মার খুব নিকটবর্তী হওয়ায় বিদ্যালয়টি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পদ্মা থেকে নিরাপদ দূরুত্বে একটি জায়গা নির্ধারণ করে রেখেছি বিদ্যালয়টির জন্য। যাতে করে চরের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয়।’