বগুড়ায় চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত পাঁচ আসামি কারাগারে আয়েশি জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারাগারের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় আসামিরা বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছেন বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে এই তথ্য উদঘাটন হয়েছে। এছাড়া বাদীপক্ষের আইনজীবীও একই ধরনের অভিযোগ করে বলেছেন শাহীন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম কারা কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে অনৈতিকভাবে আয়েশি জীবনযাপন করছেন। তাকে বগুড়া কারাগার থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য প্রশাসনের ওপর মহলে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।
শাহীন হত্যা মামলা প্রধান আসামি বগুড়া পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরিবহন ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামসহ পাঁচজন আসামি বগুড়া জেলা কারাগারে রয়েছেন। অপর চার আসামিরা হচ্ছেন- পায়েল শেখ, রাসেল, ছোট বিপুল এবং রুবেল। গত পাঁচ মাসে পুলিশ বিভিন্ন সময় এসব আসামিদেরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে আসা আসামিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি নেতা শাহীন হত্যা মামলা প্রধান আসামি আমিনুল ইসলাম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই কারা অভ্যন্তরে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তার সহযোগীরা সাধারণ কয়েদী হিসেবে বন্দি রয়েছেন। জামিনে আসা বেশ কয়েজন আসামি জানায়, কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ম্যানেজ করে আমিনুল ও তার সহযোগীরা কারা অভ্যন্তরে পৃথকভাবে রান্না করে খাবার খেয়ে থাকেন। এজন্য আমিনুলের পক্ষ থেকে প্রতিদিন তাদের পছন্দনীয় বাজার করা হয়। সপ্তাহের শুক্রবার তাদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয় নিজেদের অর্থায়নে। এছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিদিন কয়েক দফা পরিবারের সদস্য ছাড়াও লোকজন দেখা করে থাকেন আমিনুলের সাথে।
শাহীন হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, স্পর্শকাতর এই মামলার প্রধান আসামি এসব সুবিধা নেওয়ার জন্য কারাগারে টেলিভিশন এবং বেশ কয়েকটি সিলিং ফ্যান দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।
প্রভাবশালী এই আসামি কারাবন্দী থেকেও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। এছাড়াও আসামি কারা অভ্যন্তর থেকেই লোক মারফত সাক্ষীদেরকে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় প্রশাসনের উচ্চ মহলে জানানো হলেও কোন কাজ হয়নি।
বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার সাঈদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আলাদা রান্না করে খাওয়ার সুযোগ নেই। তবে কেউ মেডিকেলে থাকলে পৃথক খাবার খেয়ে থাকেন।
কারাগারে ফ্যান প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা নাই। তিনি বলেন, কারাগারে ফ্যান এবং টেলিভিশন সরকারিভাবে এখনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরাই দিয়ে থাকেন। তবে বন্দি অবস্থায় কোন আসামির কাছে থেকে কোন জিনিস নেওয়া ঠিক না।
উল্লেখ্য, বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনকে গত ১৪ এপ্রিল রাতে নিশিন্দারা উপশহরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরিবহন ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে আমিনুল ইসলামের পরিকল্পনায় তাকে খুন করা হয় বলে গ্রেফতাকৃত অপর চারজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।