৭ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি ১৮ মামলা

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-09-01 22:55:59

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর রামু ট্র্যাজেডির ৭ বছর পূর্ণ হলেও এখনো আলোর মূখ দেখেনি এ ঘটনায় দায়ের করা ১৮ মামলা। ২০১২ সালে ফেসবুকে গুজবের জের ধরে ভয়াবহ হামলার শিকার হন রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। পুড়িয়ে দেয়া হয় শত বছরের বুদ্ধমূর্তি, আরাধনার মন্দির আর আঘাত আসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে।

তবে বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের প্রচেষ্টায় সেখান থেকে উঠে আসা গেলেও আসামিদের বিচার নিয়ে চরম হতাশা বিরাজ করছে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রামুর ঘটনার পরপরই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলার মধ্যে একটি আপোষ হয়ে গেছে বহু আগেই। পুলিশ বাদী হয়ে করা বাকি ১৮টি মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ ঘটনার সূত্রপাত যার ফেসবুক থেকে শুরু সেই উত্তম বড়ুয়ার হদিস মিলেনি সাত বছরেও। গেল ৭টি বছর ধরে তার খোঁজ দিতে পারেনি প্রশাসন।

হামলার ঘটনায় রামু থানার আট মামলার এজাহারে মোট আসামি সাত হাজার ৮৭৫ জন। এর মধ্যে ১১১ জনের নাম-ঠিকানা থাকলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছিল মাত্র ৭৪ জনকে। আর সন্দেহভাজনদের মধ্যে আটক করেছিল ১৩২ জনকে। উখিয়া থানার সাত মামলায় পাঁচ হাজার ৬২৪ আসামি থাকলেও গ্রেফতার ছিল ১১৬ জন।

টেকনাফ থানার দুটি মামলায় ৬৫৩ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ছিল ৬৩ জন। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুই মামলায় এক হাজার ৩০ আসামি থাকলেও গ্রেফতার ছিল ৯৮ জন। তবে গত সাত বছরে ধাপে ধাপে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছেন সব আসামি।

আরও পড়ুন: রামু ট্রাজেডির ৭ বছর

কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা বর্তমানে সাক্ষী দিতে না আসায় মামলাগুলো ঝুলে আছে। যদি তারা সাক্ষী দিতে আসেন তাহলে একটি সুষ্ঠু বিচার করা হতো। সাক্ষীরা না আসায় কিছু করা যাচ্ছে না। তাই মামলাগুলো আলোর মুখ দেখছে না।

তিনি আরও জানান, ১৮টি মামলা আদালতে বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে বিচারকাজ বিলম্বিত হচ্ছে।

তবে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরা বলছেন, ভয়, আর মামলা প্রক্রিয়ার প্রতি অবিশ্বাসের জায়গা থেকে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে অনীহা দেখাচ্ছেন।

বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সাক্ষীদের মাঝে একটা চিন্তা কাজ করছে। সেটি হচ্ছে অনেক লোককে কোনো কারণ ছাড়া এ মামলায় জড়িত করা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, এ ঘটনার যারা মূলনায়ক তাদের এই মামলাগুলোতে আসামি করা হয়নি। যার কারণে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: সম্প্রীতির নতুন আলোয় রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের আরেক নেতা জানান, ঘটনার অনেক ছবি ও ভিডিও রয়েছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির তদন্তও হয়েছে। এতে চিহ্নিতদের অনেকেই মামলার আসামি নন। আবার এমন অনেক ব্যক্তিকে মামলায় জড়ানো হয়েছে যারা কোনভাবেই এ ঘটনায় জড়িত নন। ফলে বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, রামুতে হামলার ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়। প্রত্যেকটি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ওই মামলাগুলো এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে আদালত যদি মনে করে সাক্ষীদের নোটিশের মাধ্যমে আদালতে নিয়ে আসবে, সে ব্যাপারে পুলিশ সহযোগিতা করবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গুজবের জেরে রামুর ঘুমন্ত বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ভাংচুর করা হয় শত বছরের মূর্তি ও মন্দির। আগুনের লেলিহান শিকায় চাপা পড়ে যায় রামুর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর