তথ্য গোপন করে সরকারি বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেও বছরের পর বছর বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জয়দেব স্বজ্জন। এ নিয়ে বিব্রত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তবে সরকার চাইলে বাড়ি ভাড়া বাবদ নেওয়া অর্থ ফেরতে দেবেন বলে দাবি অভিযুক্ত শিক্ষকের।
২০১২ সালের ২৬ আগস্ট পটুয়াখালী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর জয়দেব স্বজ্জন। এরপর থেকে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত দোতলা ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ২০১৬ সালের ১ মার্চ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরও তিনি ওই ভবনে বসবাস করে যাচ্ছেন। সরকারি বাড়িতে বসবাস করলেও বাড়ি ভাড়া কাটার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ অর্থ না কেটে তা বেতনের সঙ্গে উত্তোলন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি বাড়িতে বসবাস করেও বাড়ি ভাড়া না কেটে প্রতি মাসে তিনি ২৩ হাজার ৫০০ টাকা করে বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করছেন। তবে বেতন উত্তোলনের সময় অধ্যক্ষ জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতি মাসে যে তথ্য দিচ্ছেন তাতে তিনি সরকারি ভবনে বসবাস করছেন না বলে মুচলেকা দিচ্ছেন। কিন্তু পরিবার নিয়েই তিনি শিক্ষক কোয়াটারেই থাকছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভবনের বাইরে থেকে পলেস্তারা খসে পড়লেও রুমের ভেতর সংস্কার করে পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। আর নিজের নিরাপত্তার জন্য ভবনের চারপাশে সিসি টিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এছাড়া তার কক্ষে লাগানো হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেশিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর জয়দেব স্বজ্জন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, তিনি যে ভবনটিতে বসবাস করেন সেটি পরিত্যক্ত। তবে কবে এটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। তবে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।
তবে অধ্যক্ষ প্রফেসর জয়দেব স্বজ্জন দাবি করেন তিনি প্রতি মাসে ভাড়া কাটেননা, কিন্তু সরকার চাইলে তিনি যে টাকা নিয়েছেন তা ফেরত দেবেন।
পটুয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এভাবে তথ্য গোপন করে বাড়ি ভাড়া না কাটার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাও কিছুটা বিব্রত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক পরিষদের সচিব গাজী জাফর ইকবাল বলেন, ‘এটি যতটা না নৈতিক বিষয় এর থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে একজন অধ্যক্ষ’র সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে ওই বাড়ি যায় না। বিষয়টি আসলেই বিব্রতকর।’
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বর্তমানে প্রতিমাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রতিমাসে উত্তোলন করছেন। এতে করে গত ৬ বছরে তিনি সরকারি বাড়িতে বসবাসের তথ্য গোপন করে সরকারের প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।