ঝড় বৃষ্টি হলেই অঘোষিতভাবে বন্ধ সরকারি স্কুল

মানিকগঞ্জ, দেশের খবর

খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মানিকগঞ্জ | 2023-08-26 14:26:31

লেছড়াগঞ্জ চর থেকে: মানিকগঞ্জের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকার একটি চরের নাম লেছড়াগঞ্জ। প্রায় ১২ হাজার লোকের বসবাস এই চরাঞ্চলে। সরকারি সুযোগ সুবিধার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত চরাঞ্চলের এই বাসিন্দারা। শিশুদের শিক্ষার জন্যও নেই উন্নত মানের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কাজেই বাধ্য হয়েই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর ভরসা চরাঞ্চলবাসীর। তবে ঝড় বৃষ্টি বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই অঘোষিতভাবে বন্ধ থাকে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি নির্দেশনা মতে সকাল থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ক্লাস হওয়ার কথা থাকলে ছুটি হয়ে যায় দুপুরেই। এমন ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় লেছড়াগঞ্জের সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে সরেজমিনে সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয় কক্ষে তালা ঝুলানো দেখা যায়। সকালে নাম মাত্র দুই একটি ক্লাস হওয়ার পরেই দুপুরেই বিদ্যালয় কক্ষে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এমন অভিযোগ করেন এলাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুরো এলাকাবাসী।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের সেলিমপুর এলাকার মধ্য বয়সী ব্যক্তি সোনামুদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম'কে জানান, কৃষি কাজ ছাড়া চরে বিকল্প কাজের কোনো মাধ্যম নেই। কাজেই ইচ্ছে থাকার পরেও সন্তানদেরকে পড়াশুনা করাতে পারেননি তিনি। তবে নাতি-নাতনিদেরকে সাধ্য অনুযায়ী পড়াশুনা করাতে চান তিনি। তবে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবহেলার কারণে সে আশা পূরণ হওয়া বেশ কষ্টকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নান্নু মোল্লা নামের এক যুবক বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয় বন্ধ।’

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুস সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা শিক্ষা বান্ধব সরকার। তবে কিছু ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে পদ্মানদী বেষ্টিত এই লেছড়াগঞ্জ চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। শিক্ষকদের এমন অবহেলা বন্ধ না হলে প্রাথমিকের গণ্ডি থেকেই ঝরে পড়বে অনেক শিশু।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নারগিস আক্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম জানান, ব্যক্তিগত কাজে বিদ্যালয়ের বাইরে রয়েছেন তিনি। তবে অন্য শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত কাজের জন্য কোনো ছুটিও নেননি বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিলুফা রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম'কে জানান, চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর