নড়াইলের মধুমতি-নবগঙ্গা নদীতে প্রচণ্ড স্রোতে পাড় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। একই সঙ্গে পানি বেড়েছে নদীতে। ফলে মধুমতি-নবগঙ্গার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়া মধুমতি নদীর ঘাঘা, মল্লিকপুর, শিয়েরবর, মাকড়াইল, কালিয়ার নবগঙ্গা নদীর করগাতি, ছোট কালিয়া, শুক্তগ্রামসহ কয়েকটি এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। শুক্তগ্রাম এলাকার বাজার এলাকায় নবগঙ্গা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। হঠাৎ ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘরসহ ফসলি জমি। ভাঙন অব্যহত থাকলেও তা রোধে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতায় গৃহহীন হয়ে পড়েছেন কালিয়া উপজেলার শতাধিক বাসিন্দা। ভাঙন আতঙ্কে ঘর-বাড়ি ভেঙে নিরাপদে যাচ্ছেন অনেকে।
শিয়েরবর এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙন এ এলাকার নিত্য দিনের ঘটনা। প্রতিবছরই নদী ভাঙন হলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। গত বছরেও নবগঙ্গার তীব্র ভাঙনে বিলীন হয়েছে শুক্তগ্রাম এলাকার পালপাড়া, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কয়েক হাজার একর জমি। প্রতিনিয়ত ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নবগঙ্গা পাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
শুক্তগ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস আলী জানান, গত ৩৫ বছরে নবগঙ্গা নদীতে এমন পানি দেখেননি। এই পানি বাড়ার কারণে তাদের বাড়িটি এক রাতেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন যে বালির বস্তা ফেলছে তা নদীতে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে কোনও কাজে আসছে না।
কালিয়া উপজেলার বাবরা-হাচলা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন পিকুল জানান, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এবারের নদী ভাঙনে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই ভাঙন ঠেকানো যাবে।
লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান তসরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তরা বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা কোনও কাজে আসছে না। নদীর বাঁধ রক্ষায় অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের নামে প্রতিবছরই হরিলুট চলে। কাজের কাজ কিছুই হয় না।‘
তিনি আরও বলেন, ‘নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হলেও কোনও সহযোগিতা করা হয়নি।’
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ নেওয়াজ তালুকদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘পদ্মায় পানির চাপ থাকায় আমাদের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে প্রায় ৭ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা নদী ভাঙনের বিষয়টি স্বীকার করে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমি ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। সাত শতাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।’