ঢাবিতে চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত সুবর্ণার

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

এস এম জামাল, ষ্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-23 23:27:27

অদম্য মেধাবি শিক্ষার্থী সুবর্ণা খাতুন। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘গ’ ইউনিটের মেধা তালিকায় ৯২৭ নম্বরে এসেছে তার নাম। মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও তার ভর্তিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দিনমজুর মায়ের এ মেধাবী সন্তানের ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। শুধু ভর্তি নয়, কিভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করাবে তার পরিবার এটা নিয়েও চিন্তিত। অশ্রু ভেজা চোখে কথাগুলো বলছিলেন সুবর্ণার মা আরজিনা বেগম।

রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ার কবি আজিজুর রহমান সড়কের সুবর্ণা খাতুনের বাড়ীতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সঙ্গে।

সুবর্ণার মা আরজিনা খাতুন শহরতলীর বটতৈল এলাকায় একটি তুলা মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, মেয়ে সুবর্ণা খাতুনের জন্মের পর তার বাবা মারা যায়। অন্যের হোটেলে এবং তুলা মিলের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে মেয়েকে খুব কষ্টে লালন-পালন করেছেন।

তার বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, একটি ছোট্ট খুপড়ি ঘরে মা আর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন আরজিনা বেগম। তার মেয়ে আক্ষেপ করে বলেন, শোবার ঘরই নেই যেখানে আবার পড়ার ঘর থাকবে কেমন করে? সুবর্ণার নিজের কোনো পড়ার ঘর না থাকায় মামার ঘরের মধ্যে চৌকির ওপর বসেই পড়ালেখা করেন।

ঢাবিতে চান্স পেয়েও ভর্তির অনিশ্চয়তার বিষয়ে সুবর্ণা জানান, মায়ের পক্ষে ভর্তির জন্য এতগুলো টাকা জোগাড় করা সম্ভব না। নিজে টিউশনি করে যা জুগিয়েছিলাম, তা তো ভর্তি পরীক্ষার ফরম আর ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচ মেটাতেই শেষ। তিনি বলেন, খুশি হয়েছিলাম চান্স পেয়ে। কিন্তু ভর্তি বা টাকার চিন্তায় সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় আমার পূরণ হবে না। তিনি বলেন, কখনও গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে পারিনি। মামার রুমের চৌকির ওপর বসেই পড়ে পড়ে আমি এতদূর এসেছি। এ পর্যন্ত কোনো ক্লাসের সব বই কিনতে পারিনি। সহপাঠীদের কাছ থেকে ধার করে বই নিয়ে পড়েছি। শিক্ষকরাও সহযোগিতা করতেন। ২০১৬ সালে এসএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছিলাম। পরে অর্থের অভাবে আর কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। কিন্তু পরের বছর অনেকটাই জেদ করেই কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. সাইফুল আলম জানান, সুবর্ণা অসম্ভব মেধাবী। কিন্তু মেয়েটার বাবা নেই, খুব দরিদ্র। আমাকে ওর একজন স্কুল শিক্ষক এ বিষয়ে জানান। আমরা যতটুকু পেরেছি ওকে সাহায্য করেছি। আমার কাছে ইংরেজি পড়ত। ইংরেজিতেও সে খুবই ভালো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর