চার শিশুর সংসার: গৃহকর্তা ১২ বছরের আশিক

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্টিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মেহেরপুর | 2023-08-29 11:03:13

কিশোর আশিক। বয়স ১২। এ বয়সে বাতাসের মতো ছুটে বেড়ানোর কথা। স্কুলে যাবার কথা। কিন্তু এমনটি হয়নি। কেননা তাকে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের দায়িত্ব। আর তাই আশিকের নেই কোনো চঞ্চলতা কিংবা দুরন্তপনা।

আশিক মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের রাশিদুল ইসলামের ছেলে। চার ভাই-বোনের মধ্যে আশিক সবার বড়। অন্যরা হলো মুস্তাকিম, রিয়াজ ও কুলছুম। ওরা সবাই লেখাপড়া করতে চায়। কেউ হতে চায় ডাক্তার, আবার কেউ পুলিশের বড় কর্মকর্তা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেছে।

বেশ কয়েকবছর আগে বাবা রাশিদুল দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তিনি। এতে করে চরম বিপাকে পড়ে যান আশিকের মা সানোয়ারা। কিন্তু নিয়তির খেলায় তিন বছর আগে মারা যান সানোয়ারা।

তারপর থেকেই আশিক তার পরিবারের হাল ধরে। নেমে পড়ে নতুন এক জীবনযুদ্ধে। গ্রামে সে এখন চা বিক্রি করে। বাকি ভাই-বোনকে ফেলে রেখে বাবা চলে গেলেও তাদেরকে ছেড়ে যাননি দাদা লালন হোসেন।

আশিকের একমাত্র ছোট বোন

লালন হোসেন বলেন, নাতিগুলো লেখাপড়া করুক এটা আমি চাই। চায়ের দোকান দিয়েতো সংসারই চলে না লেখাপড়া করামু কেমনে। জানি না ওদের ভবিষ্যত কী। ওদের চিন্তায় দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে পড়তেছি। অনেকেই বলেছেন এই বাচ্চাগুলোকে কোথাও দত্তক দিতে। কিন্তু কলিজার টুকরাগুলোকে কিভাবে অন্যের হাতে তুলি দেব? আমার জীবন থাকতে ওদেরকে দত্তক দেবো না।

প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান বলেন, ওরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে। আমাদেরও খারাপ লাগে। তাই যতটুকু পারি সাহায্য করি। কিন্তু আমরা নিজেরাই তো গরীব। বাচ্চাগুলো লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু কে দায়িত্ব নেবে।

আশিকের প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক মোকলেছুর রহমান বলেন, ওদের অবস্থা খুবই খারাপ। বাচ্চাগুলো যেহেতু স্কুলে পড়তে চায় তাই ওদের সেই সুযোগ করে দেবার চেষ্টা করবো। কিন্তু ওদের সংসারটা চালাবে কে? সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসতো তাহলে ওরা আলোর মুখ দেখতে পেতো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য তৌহিদী হাসান লিলু বলেন, পরিবারটি বড় অসহায়। আমি যতটুকু পারি সাহায্য করবো। কিন্তু আমারতো একটা সীমাবদ্ধতা আছে। এসময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর