অধ্যাপক আফেন্দি নুরুল ইসলাম (৭২)। শিক্ষকতা থেকে অবসরে এসেছেন একযুগ হলো। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও থেমে নেই তার প্রতিবাদ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনিদের বিচার দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইলের বিভিন্ন সড়কে ঘুরছেন। তার এ ধরণের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ সাধারণ মানুষও সমর্থন করেছেন।
অধ্যাপক আফেন্দি নুরুল ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলের শেরপুর ইউনিয়নের চুড়ন্তিপাড়া গ্রামে। কর্মজীবনে তিনি নান্দাইল আদর্শ ডিগ্রী কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসরের পর তিনি বাড়িতেই থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ঘটে যাওয়া অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়ে রাস্তায় নেমে জনসাধারণের দৃষ্টি কেড়েছেন তিনি। তাই বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের খুনিদের বিচারের দাবিতে রোববার (১৩ অক্টোবর) প্রখর রোদের মধ্যে একা একা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন অধ্যাপক আফেন্দি। বিচারের দাবিতে বিলি করেছেন লিফলেট।
হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো পদত্যাগ চাই বুয়েট ভিসির। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে কেন? বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা ছাত্ররাই তো বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলাম।
আরও লেখা ছিল, দীর্ঘদিনের ভুল শিক্ষা পদ্ধতি, পরীক্ষা কেন্দ্র আর কোচিং সেন্টারের দুর্নীতির কারণেই অধিকাংশ তরুণের ভালো মন্দের জ্ঞান অর্জিত হয়নি। তারা অভদ্র মানবতা ও দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে ওঠেছে। তাই আজ দুর্বৃত্ত দানবে ভরে গেছে বাংলাদেশ। অকারণে মানুষ খুন করা যাবে না। খুন করা কবিরা গুনাহ। কিয়ামতের দিন খুনিদের বিচার আগে হবে। কোরআন হাদিসের এমনি ভাষ্য। ফাহাদকে কেন খুন করা হলো এর সুস্পষ্ট কারণ কি তা জানা হলো না। ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি করে দিয়েছে এমন উত্তেজনার কথা ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করা নিশ্চয়ই অনুচিত। ভারতের কাছে আমরা অকৃতজ্ঞ হতে পারি না। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ৫/৬ হাজার মানুষের বাঁচার জন্যে ফেনী নদীর সামান্য পানি দেওয়ার চুক্তি হলো। আর এ জন্যেই বাংলাদেশ বিক্রি হয়ে গেল? ফেনী নদীর উৎস তো ভারতেই। এর সামান্য অংশ বাংলাদেশে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। চিরজীবি বাংলাদেশ।
রোববার রাতে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আফেন্দির। তিনি বলেন, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। তাই বিবেকের তাগিদেই একাই বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। লিফলেট বিতরণ করছি। আমার দাবি আবরার হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত বিচার যেনো তার পরিবার দেখতে পারে।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম আফেন্দি আরো বলেন, আমি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নই। মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলতে হবে এটা কোনো যুক্তি হতে পারেনা। শিক্ষাঙ্গনে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেখানোর পাশাপাশি নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বের শিক্ষাও দিতে হবে। যেনো আর কোনো মেধাবীর প্রাণ ঝরে না পড়ে।