ভক্তি প্রকাশের অনন্য নজির

কুষ্টিয়া, দেশের খবর

রেজা-উদ দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লালন আখড়া (ছেঁউরিয়া) থেকে | 2023-08-31 17:33:19

'মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপা রে তুই মূল হারাবি/মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি'- শত বছর আগে ফকির লালন শাহ সোনার মানুষ হওয়ার মূলমন্ত্র এভাবেই তুলে ধরেছেন তার ভক্ত সাধুদের মধ্যে।

আজও সেই সোনার মানুষ হওয়ার দীক্ষা নিতে তাই দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালন ভক্ত, সাধু, আশেকেরা ছুটে আসেন কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়া এলাকার লালন আখড়ায়।

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর ১২৯তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে এখানে বুধবার (১৬ অক্টোবর) শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। নানা আচার, প্রথা ও গানের মধ্য দিয়ে ভক্তরা তাদের অমর সাঁইজিকে স্মরণ করেন।

Lalon
লালন আখড়ায় ভক্তদের ভিড়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

শুক্রবার তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিন। এদিন সকালে সরেজমিন দেখা যায়, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার দবির মোল্লা গেট দিয়ে একটি সড়ক নেমে গেছে লালন আখড়ার দিকে। এখান থেকে আখড়ার দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের মতো। শেষ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাই সকাল থেকেই অসংখ্য বাউল হাতে এক তারা, দোতারা নিয়ে সে পথ দিয়েই হেঁটে চলেছেন।

খানিকটা পথ যেতেই রাস্তার বাম পাশে নজরে আসে টলটলে পানির বিশাল দীঘি। স্থানীয়রা এটিকে কালী নদী হিসেবে চেনে। জনশ্রুতি আছে, বসন্ত রোগে আক্রান্ত কিশোর লালনকে কলার ভেলায় ভাসমান অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করেছিলেন ফকির সিরাজ সাঁই।

Lalon
এ ঘরেই শুয়ে আছেন লালন শাহ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 কালী নদী পার হতেই লালন আখড়ার মূল ফটক। শুক্রবার সকালে চারদিক তখন লালন ভক্ত বাউল, সাধুদের পদচারণায় মুখর।

এ সময় মূল ফটকের সামনের পাকা রাস্তায় মাথা ঠেকিয়ে ভক্তি প্রকাশ করে আখড়ার ভেতরে ঢুকতে দেখা গেল সাদা বসনের এক সাধুকে।

সামনে ৫০ মিটার এগুলেই লালন সাঁইয়ের মাজার। এক গম্বুজের এ মাজারে শুধু লালনকেই না, তার ঘনিষ্ঠ মুরিদ ও ভক্তদেরও সমাহিত করা হয়েছে।

দেখা গেল, মাজার ঘরের প্রবেশ দুয়ারকে ঘিরে দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থী, ভক্ত ও বাউল সাধকরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের কেউ মাজার ঘরে প্রবেশ করে লালন সাঁইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমাধির বেদিতে মাথা ঠেকাচ্ছেন, কেউ বা আবার মাথা নোয়াচ্ছেন। লালনের সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে কয়েক সেকেন্ড নীরবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন কেউ কেউ। সমাধির পাশেই রাখা বিশাল দানবাক্সে সাধ্যমত টাকা-পয়সা দান করে মানতও করছেন অনেকে। মাজারের ধুপ আর আগরবাতির ঘ্রাণ যে কাউকে নিয়ে যাবে অপার্থিব এক জগতে।

Lalon
লালন আখড়ায় ভক্তদের কবর, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 লালন আখড়ার চারদিকে সাধু বাউলদের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছোট ছোট দলে তারা গোটা চত্বরেই বসে পড়েছেন। গান বাজনায় কিংবা ধ্যানে মগ্ন কেউ কেউ। খোশগল্প আর লালনাচার নিয়েও চলছে আলোচনা।

লালন আখড়ায় কথা হয় ফকির হৃদয় সাঁইয়ের সঙ্গে। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘সাঁইজির স্মরণোৎসব আসলে সাঁইজির ভক্তদের মিলনমেলা। তার ভাব দর্শন হলো মানুষ ভজলে যে কেউ সোনার মানুষ হবে। এ দর্শন কখনো শেষ হওয়ার নয় বরং দিন দিন সেটা আরো গভীর থেকে গভীরে ছড়িয়ে পড়ছে। সাঁইজির দরবারে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর