যথাযথ সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার অদূরে খিলগাঁও থানার কায়েতপাড়া হাট। হাটটি আগে নাসিরাবাদ ইউনিয়নের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ নং ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।
জানা গেছে, হাটটি বৃটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে। কিন্তু বর্তমানে হাটের টিনসেড ঘরগুলোর বেহাল দশা। প্রতি শনিবার বসে সপ্তাহিক এ হাটটি। আগে এই হাটে অনেক লোকের সমাগম হলেও এখন তেমন মানুষ আসে না। আগে নৌকার জন্য বিখ্যাত ছিল হাটটি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এখন ভাগ হয়ে বৃহস্পতিবার নৌকার হাট আর শনিবার অন্যান্য পণ্যের হাট বসে। তবে এখনও নৌকা দিয়ে হাটে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এমনকি আগে নৌকার পসরা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসতেন এই হাটে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সুনজর না থাকা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় হাটটির এই বেহাল দশা। এছাড়া পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহও স্বাভাবিক নয় এই হাটে। রাস্তাঘাট ভালো না হওয়ায় দূর থেকে পণ্য আনা নেওয়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। তবে স্থানীয় কৃষকদের চাষ করা টাটকা কৃষি পণ্যের জন্য কায়েতপাড়া হাটের জুড়ি নেই।
প্রবীণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকজন হাটের সরকারি জায়গা দখল করে স্থায়ী দোকান তুলেছেন। ফলে দূর থেকে আসা বেশিরভাগ দোকানিকে খোলা আকাশের নিচেই পণ্য নিয়ে বসতে হয়। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে বেশি খাজনা আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে এবং সিটি করপোরেশনের সুনজরে পড়লেই ঐতিহ্যবাহী এ হাটটি প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশা প্রবীণ ব্যবসায়ীদের।
বিক্রেতা রবি দাশ জানান, আগে এই হাটে অনেক লোকের সমাগম হতো। এখন তার কিছুই নেই। যখন ৩টা ঝাড়ু এক পয়সায় বিক্রি হতো তখন থেকে তিনি এ হাটে আসেন। কিন্তু এখন খাজনা বেশি হওয়ায় ও বিক্রি কমে যাওয়ায় তার আর হাটে আসতে মন চায় না।
মোহাম্মদ ছাত্তার নামের স্থানীয় একজন জানান, স্থানীয়রা হাটের জায়গা দখল করে স্থায়ী দোকান তুলেছেন। ফলে হাটের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। তবে ছোট পরিসরে হলেও বসছে ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি।
হাটের সাবেক ইজারাদার গরীবুল্লাহ জানান, এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। জিনিসপত্র আনতে খুব কষ্ট হয় বিক্রেতাদের। এখানে বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাই সন্ধ্যার আগেই হাট শেষ করতে হয়।
মোহাম্মদ আলী নামের এক ক্রেতা জানান, জন্মের পর থেকেই এ হাট দেখছেন তিনি। এই হাটে বাজার করতে করতে তার বয়স শেষ হতে চলছে। আগে এতো মানুষের সমাগম হতো যে হাঁটা যেতো না। তবে টাটকা পণ্য পাওয়া যাওয়ায় এখনও তিনি এই হাটে আসেন।
এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলেই হাটটি আবার জমে উঠবে। আমরা চাই না, ঐতিহ্যবাহী হাটটি হারিয়ে যাক। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ব্যবসায়ী ওবায়দুল ইসলাম জানান, তিনি এই হাটে ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করেন। আগে এক মাইল দূর থেকে এ হাটের গমগম শব্দ শোনা যেতো। এখন এটা যে হাট সেটা নাকি বোঝার উপায় নেই।