নুসরাত হত্যা মামলার রায়, আদালতে তিন স্তরের নিরাপত্তা

ফেনী, দেশের খবর

ইসমাইল হোসাইন রাসেল ও মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ফেনী থেকে | 2023-08-20 01:12:01

ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রায়কে কেন্দ্র করে বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতাও রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আদালত প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, আদালত ভবনের গেটে তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া আদালত প্রাঙ্গণের প্রতিটি জায়গায় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।

ফেনী জেলা পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘রায়কে ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে আছি। রায় ঘোষণা পর্যন্ত আমরা সতর্ক অবস্থানে থাকব।’

Nusrat
নুসরাত


এদিকে, রায়কে ঘিরে নানা হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন নুসরাতের পরিবারের সদস্যদরা। এ জন্য পুরো পরিবার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তাদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ফেনী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সামনে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের রায়কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই। কোনো নিরাপত্তা হুমকি হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় তৈরি করে রেখেছি আমরা। আজকের রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেনী জেলার সব পুলিশ কর্মকর্তা এরই মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন।

তিনি বলেন, নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করন এবং রায়ের আগে এবং পরের পরিস্থিতির নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোকাবিলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে কোন অপরাধীর অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো আশঙ্কাই নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১০ জুন নুসরাত হত্যা মামলাটি আদালত আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন।

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ও বাদীপক্ষের খণ্ডন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।

Police
ফেনী আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠায়।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণ। অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষার কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন ঢেলে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার চিৎকারে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল নুসরাতের মৃত্যু হয়। ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান আটজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর