বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১৬ আসামিকেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে বহিষ্কার করা হলেও এখনও মাদ্রাসা থেকে মুছে যায়নি সিরাজের নাম।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) মাদ্রাসা ঘুরে দেখা গেছে, মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে নেমপ্লেটে এখনো এস. এম সিরাজ উদ্দৌলার নাম রয়েছে। তবে কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি সভা করে অধ্যক্ষ সিরাজকে বরখাস্ত করে। একইসঙ্গে মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে গত ১১ এপ্রিল অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার এমপিও স্থগিত করে সরকার।
মাদ্রাসার বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইনের নাম থাকলেও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে সিরাজের নামটি এখনও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসার এক শিক্ষক কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। এসময় তিনি দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। পরে শিক্ষকদের কক্ষে থাকা বাংলা বিষয়ের প্রভাষক খুদিস্তা খানম অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিলেও এ বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হোসাইনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে রায় ঘোষণার পর মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তার স্বার্থে মাদ্রাসার মূল ফটকে কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ভেতরে শুনশান নিরবতা। সব কক্ষই ছিল তালাবদ্ধ। দুপুরে মাদ্রাসায় প্রবেশ করার সময় শিক্ষক কক্ষে একজন শিক্ষিকা থাকলেও কিছুক্ষণ পর কক্ষ তালাবদ্ধ করে তিনিও চলে যান।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন মাদ্রাসায় ক্লাস হচ্ছে, কিন্তু আজ সকাল থেকেই তেমন কোনো সাড়া শব্দ নেই। মামলার রায়ের কারণে হয়ত কেউ আসেননি। আর ছাত্র-ছাত্রীরাও অনেকে রায় জানতে আদালতে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সিরাজ। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। বান্ধবী নিশাতকে মারধরের কথা বলে কয়েকজন সহপাঠী কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। এ ঘটনায় তৎকালীন অধ্যক্ষ সিরাজ, পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। পরে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।