ছাত্রলীগ কর্মী আনাস হত্যা, বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবার

কক্সবাজার, দেশের খবর

মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কক্সবাজার | 2023-08-25 10:20:13

রোজার ঈদের কয়েকদিন আগেই ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয় কক্সবাজারের চকরিয়ার ছাত্রলীগ কর্মী আনাস ইব্রাহীম। ঘটনার পরদিনই আনাসের বাবা ৬ জনের নাম উল্লেখ্য করে মামলা করেন। এরপর ৩ আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। ঘটনার ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের প্রভাবে চার্জশিট দিচ্ছে না পুলিশ এমন অভিযোগ আনাসের পরিবারের।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ মে চকরিয়া উপজেলার ওয়েস্টার্ন প্লাজা মার্কেটে ঈদের বাজার করতে গিয়ে বখাটেদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় আনাস ইব্রাহীম। এসএসসি উত্তীর্ণ আনাস ছাত্রলীগ কর্মী ছিল। মামলায় নাম উল্লেখিত ৬ আসামির মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার ও একজন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতা মোহাম্মদ সোহেল ও মোহাম্মদ বাবু। যারা স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না পুলিশ। পুলিশের অনীহার কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন আনাসের স্বজন ও প্রতিবেশীরা।

নিহত আনাসের বাবা মাওলানা হাফেজ নেছার আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'ছাত্রলীগ করার কারণে আজ আমার সন্তানকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এসব বখাটের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও মূল আসামিদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কিছু প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে পুলিশ মূল আসামিদের ধরছে না। কারণ ওইসব বখাটেরা তাদের ছত্রছায়ায় ছিল। যার কারণে সুষ্ঠু বিচার নিয়ে চিন্তিত আমরা।'

তিনি আরও বলেন, 'আসামি সোহেল ও বাবু প্রকাশ্যে ঘুরছে তবুও পুলিশ বলছে তারা আত্মগোপনে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।'

আনাসের মা তসলিমা জান্নাত বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আসামিদের আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে এসে বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ যদি এসব আসামিকে হেফাজতে নিতো তাহলে আজ এ বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারতো না কেউ। কিন্তু আসামিরা বাইরে থেকে যাওয়ায় সবাই আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। আমি অতি দ্রুত মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার পিবিআই বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবি করছি।'

আনাসের বড় ভাই আয়াস ইব্রাহীম বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন’ যে শিশু হত্যার ব্যাপারে যত প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আনাস হত্যা মামলা নিয়ে পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার ও দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দাবি জানাচ্ছি।'

তবে মামলাটির তদন্ত নিয়ে কোনো ধরণের অবহেলা বা প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মাসুম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'যে দুইজন আসামি পলাতক রয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতা নিচ্ছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারলেই একটি ফলাফল আসবে।'

ঘটনার ৫ মাসেও কেন চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার্জশিট দেওয়ার কোনো নির্ধারিত সময় নেই। তাছাড়া এখনো আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার মতো কোনো ক্লু এখনো উদঘাটন হয়নি।’

এ মামলা নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ কিছু প্রভাবশালী পুলিশের তদন্তে বাধাগ্রস্ত করছে এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘কারও কোনো প্রভাব আমার কাছে প্রযোজ্য নয়। আমি তদন্ত নিয়ম অনুযায়ী চালিয়ে যাচ্ছি। অতি শিগগিরই একটি ফলাফল জানাতে পারব। আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর