মৃত্যুর ২ দিন আগেও সৌদি থেকে ফিরতে চেয়েছিলেন নাজমা

মানিকগঞ্জ, দেশের খবর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম,মানিকগঞ্জ | 2023-08-25 16:02:29

সৌদি আরবে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার নাজমা বেগম (৪০) নামের এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে স্বজনদের কাছে বারবার বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন হতভাগ্য ওই নারী। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি তাকে উদ্ধার করতে পারেনি।

মৃত্যুর এক মাস ২৪ দিন পরে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে দেশে আসে নাজমার মরদেহ। শুক্রবার দুপুরে সিংগাইর উপজেলার ইসলামনগর কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় তার।

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইসলামনগর গ্রামে নাজমা বেগমের বাড়ি।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১০ মাস আগে স্থানীয় সিদ্দিক নামে এক দালালের মাধ্যমে সৌদিতে যান তিনি। হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরি দেয়ার কথা বলে তাকে বাসাবাড়িতে কাজ দেওয়া হয়। যাওয়ার পর থেকেই পাশবিক নির্যাতনসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হতো তাকে।

মৃত্যুর দুদিন আগেও দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের কাছে আকুতি জানান নাজমা। অর্থের অভাবে নাজমাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারেনি তার স্বজনেরা।

নিহতের স্বজনেরা জানান, স্বামী দেলোয়ার মিয়া মারা যাওয়ার পর দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার ছিল নাজমার। তাই সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পার্শ্ববর্তী রাজেন্দ্রপুর গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে মো. সিদ্দিকের মাধ্যমে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে সৌদিতে যান তিনি।

হাসপাতালের ক্লিনার হিসেবে চাকরির কথা বলে সিদ্দিক তাকে নানাভাবে প্রলোভিত করে। কিন্তু সৌদিতে তাকে গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়। সেখানে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে যৌন নির্যাতন করতো। কথা না শুনলে বেধড়ক মারপিট করা হতো।

এছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে নানা অজুহাতে মারপিট করাসহ ঠিকমতো খেতেও দিতো না। এসব কারণে নাজমা প্রায়ই তার বোন ও ছেলে মেয়েদের ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। যে কোনো মূল্যে তাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বলতেন।

নাজমার ছেলে রাজিব মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম'কে জানান, অমানুষিক নির্যাতনে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। গত ২ সেপ্টেম্বর ভোরে এক সৌদি প্রবাসী তাদের ফোন করে মায়ের মৃত্যুর খবর দেন। সৌদি আরবের আরা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের হিমঘরে তার মায়ের মরদেহ রাখা হয়েছে বলে তাদের খবর দেয়া হয়।

এরপর তারা আবারও দালাল সিদ্দিকের কাছে গিয়ে মরদেহ দেশে আনতে অনুরোধ জানান। কিন্তু মরদেহ আনতেও নানা গড়িমসি করেন সিদ্দিক। মায়ের মরদেহ দেশে আনার মতো অর্থ তাদের ছিল না। পরে সিংগাইর উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে বৈদেশিক কল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় মরদেহ বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে আনা হয়। মায়ের মৃত্যুর জন্য দালাল সিদ্দিকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান রাজিব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর