নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় বুধবার (৩০ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে আবারও মাছ শিকারে নামছে উপকূলের কয়েক লাখ জেলে। দীর্ঘ ২২ দিন অনেকটা অলস সময় পার করে আবারও সাগর-নদীতে মাছ শিকার করবেন জেলেরা।
জেলেরা জানান, অনেকে নতুন জাল তৈরি করেছে। আবার কেউ পুরাতন জাল মেরামত করে ট্রলারে তুলেছে। গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য তারা প্রয়োজনীয় বাজার, পর্যাপ্ত বরফ ও তেল সংগ্রহ করে নিয়েছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে পর্যাপ্ত মাছ শিকার করতে পারবেন তারা। এতে পেছনের ধার দেনা পরিশোধ করতে পারবেন।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, গত ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ছিলো ইলিশের প্রজনন সময়। এই সময়ে সাগর ও নদীতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। আর এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করায় পটুয়াখালী জেলায় ৩৬৬ জন জেলেকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ২০৮ জন জেলেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকিদের থেকে ৭ লাখ ১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭০০ মিটার জাল ও ৩.৭০ মেট্রিক টন ইলিশ।
এদিকে দীর্ঘ ২২ দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অধিকাংশ জেলেরা অলস সময় পার করেছে। এ সময় তাদেরকে ধার দেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। কেউ স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন। এ কারণে এখন যে মাছ পাবে তা বিক্রি করে দেনা পরিশোধের বিষয়টি তাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
পটুয়াখালীর মহিপুর এলাকার জেলে সোবাহান ফকির বলেন, ‘এই কয়দিন ডাইল ভাত খাইয়া বাইচ্চা ছিলাম। এহন সাগরে যাই দেহি ভাগ্যে কি জোডে। এই ২২ দিন পোলাপানে অনেক কষ্ট করছে। গুরা গারায় মোগো মোহের দিগে চাইয়া রইছে। কি আনমু অর কি খাইবে। সব কিছু আল্লার কাছে। সাগরে মাছ পোনা পাইলেতো আর কষ্ট থাকপে না।’
পটুয়াখালী জেলায় প্রায় ৭০ হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এর বাইরেও অনেকে মাছ শিকার ও মৎস্য সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত। সরকার থেকে এবার জেলায় ৪৫ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যেও অনেক এলাকায় জেলেদের চাল মাপে কম দেয়া হয়েছে। আবার অনেক এলাকায় প্রকৃত জেলেদের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগও আছে। এ কারণে জেলে তালিকা সংশোধনের দাবি জানান তারা। প্রকৃত জেলেদের সহায়তা প্রদান করলে আগামী সময় গুলোতে সরকারের এসব কর্মসূচি আরো সফলতা অর্জন করবে বলেও জানান তারা।