দেশে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তার এক তৃতীয়াংশ আসে ভোলা থেকে। ইলিশের প্রজনন মৌসুম ও ঝাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচি কঠোরভাবে পালন করায় ভোলায় প্রতি বছরই ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে বলে দাবি করেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
কিন্তু জেলে এবং ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিরূপ আবহাওয়ায় ইলিশ কমে গেছে। এছাড়া নদী ও সাগরে বছরে ৫ মাস ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় লোকসানে পড়েন তারা।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ভোলার বিভিন্ন নদী থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার এবং সাগর থেকে ৪০ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ কম পাওয়া গেছে।
সাধারণত ইলিশের মৌসুম শুরু হয় মে-জুন মাসে। জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে ভরা মৌসুম। অক্টোবরে মা ইলিশ যাতে অবাধে ডিম ছাড়তে পাড়ে সেজন্য ইলিশ শিকারে থাকে ৩ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা। নভেম্বর-ডিসেম্বরে ইলিশের রেণু ঝাটকায় পরিণত হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নদীতে ঝাটকা ছাড়া কিছু থাকে না। আর এই ঝাটকা ধরাও বেআইনি। মার্চ-এপ্রিল ২ মাস নদীতে নামাই নিষিদ্ধ।
মৌসুমের শুরুতে মে-জুনে প্রচণ্ড তাপদাহ থাকায় নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দেয়। এ সময় সাগরে কিছু ইলিশ থাকলেও তা শিকারে থাকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ভরা মৌসুমে ব্যাপকহারে বৃষ্টিপাত হলে কিংবা অমাবস্যা-পূর্ণিমায় মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু এই কয়দিনের ইলিশে পুরো বছরের জাল, নৌকা, খাওয়া, তেলসহ অন্যান্য খরচ উঠাতে পারেন না জেলেরা।
ভোলা জেলার দৌলতখান, তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন, ঢালচরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলেরা জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ইলিশ কম পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের।
সামরাজ মৎস্য ঘাটের জেলে ফরিদ বলেন, ‘একটা নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে গেলে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। এই ট্রিপে ৫০ হাজার টাকা পাইছি, আড়াই লাখ টাকা লোকসান হইছে।’
জেলে মঞ্জু ফরাজি বলেন, ‘ইলিশের মোট সিজন থাকে ৭ মাস। এর মধ্যে ৫ মাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। নদীতেও মাছ থাকে না। যে কারণে আমাদের লোকসান হয়।’
ঢালচরের ইলিশ ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, `এই বছর আমি দুই কোটি টাকা ইনভেস্ট করেছি। কিন্তু পেয়েছি ২০ লাখ টাকা। বাকিটা লোকসান।’
ভোলা জেলে সমিতির নেতা মো. এরশাদ বলেন, ‘অক্টোবরে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ। এখন নদীতে মাছ নাই। এ বছর গত বছরের চেয়ে মাছ অনেক কম হইছে।’
ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, ভোলা থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গেছে। যা কম। আগামী অর্থবছরে আরও বেশি ইলিশ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ভোলার ১ লাখ ৩২ হাজার নিবন্ধিত জেলে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ইলিশ সংগ্রহ করে বরিশাল, চাঁদপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।