ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তিন্নি আনোয়ার মহিলা কলেজের এমপিওভুক্তির খবরে কলেজের আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক বিলকিস বেগমকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধি মানা হয়নি। ফলে চাকরি হারিয়ে বিলকিস বেগম বর্তমানে অমানবিক জীবনযাপন করছেন।
জানা গেছে, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাপ্টেন আ.ফ.ম আনোয়ারুল হকের একক সিদ্ধান্তে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ভুক্তভোগী বিলকিস বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। আর কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ সচেতন মহল।
জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে আশুগঞ্জ উপজেলার কামাউরা এলাকায় তিন্নি আনোয়ার মহিলা কলেজটি ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। এসময় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত ও যথাযথ নিয়মে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে বিলকিস বেগম আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে কলেজটি এমপিওভুক্ত করতে ২০১৩ সালে সব শিক্ষকদের আবারও সরকারি নিয়োগ বিধি অনুযায়ী স্ব-স্ব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সরকারি নিয়োগ বিধির ১১ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, কাউকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হলে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাত দিনের নোটিশ দিতে হবে। সাত দিনের মধ্যে জবাব আসলে সেটাসহ গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত শিক্ষা বোর্ডের আর্বিট্রেশন বোর্ডে জমা দিতে হয়। তখন আর্বিট্রেশন বডি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য নোটিশ দেবেন। এরপর আর্বিট্রেশন বডিই সিদ্ধান্ত নেবে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে, কি যাবে না। কিন্তু বিলকিস বেগমের অব্যাহতির বিষয়ে এসব নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি।
এমপিওভুক্তির তালিকায় থাকায় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ারুল হকের নির্দেশে অধ্যক্ষ হাজিরা খাতায় আইসিটি প্রভাষক বিলকিস বেগমের নাম খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে লেখা হয় এবং তাকে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলকিস বেগম এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন। এতে সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩১ অক্টোবর কলেজের পরিচালনা কমিটির সভায় একক ক্ষমতা বলে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতিপত্রে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক বিলকিস বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘১১ বছর এমপিওভুক্তির আশায় নামমাত্র বেতনে শিক্ষকতা করেছি। কিন্তু এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসার পর আমাকে কোনও কারণ দর্শানো ছাড়াই একদিনের নোটিশে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শিক্ষা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আইন ও বিধি মোতাবেক আমি ন্যায় বিচার কামনা করি।’
এ বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য জানান, তারা বিষয়টি মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনার অনুরোধ করলেও সভাপতি তা শোনেননি।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাছপিয়া জান্নাত চৌধুরী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাতার একক অর্থায়নে কলেজটি চলছে। সেই দৃষ্টিকোন থেকেই প্রতিষ্ঠাতা বিলকিস বেগমকে তিন মাসের বেতন দিয়ে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। বিলিকিস বেগম তার নির্ধারিত কাজ সঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। পাশাপাশি আইসিটির কোনও ব্যবহারিক কাজও ভালোভাবে করতে পারেন না। তাই বোর্ডের সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’
তিন্নি আনোয়ার মহিলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ক্যাপ্টেন আ.ফ.ম আনোয়ারুল হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বিলকিস বেগম আইসিটি প্রভাষক হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থ। তার আইসিটির ব্যবহারিক কোনও দক্ষতা নেই। তার কাজ অন্য প্রভাষকদের দিয়ে করিয়ে নিতে হয়। অনেকবার তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলেও তিনি তা শোনেননি। তাই বোর্ডের সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি তাকে অব্যাহতি দিয়েছি।’
এ বিষয়ে চাকরি বিধি মানা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘এই বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বিলকিস বেগমের অভিযোগের কপি আমরা পেয়েছি। কলেজের প্রভাষক ও অধ্যক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সব কাগজপত্র আনতে বলা হয়েছে। সবকিছু দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’