‘মানিক আমার কোরআন রাইখা আসতে চায় নাই’

নারায়ণগঞ্জ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-21 08:32:46

মাত্র ২ ঘণ্টা আগেও বুকভরা আশা নিয়ে ছেলের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন কাকলী বেগম। কখন তার ছেলে বুকে ফিরবে। ভবন ধসের ৪৭ ঘণ্টার মাথায় ফিরল ওয়াজিদ। তবে জীবিত নয়, মৃত।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বেলা ২টায় খালের ওপরে ধসে পড়া এইচএম ম্যানশন নামের চারতলা ভবনটির নিচতলার একটি বিমের নিচে কাঁদাপানিতে চাপা পড়া অবস্থায় ওয়াজিদের অবস্থান শনাক্ত করেন উদ্ধারকর্মীরা। পরে দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বিকেল সাড়ে ৩টায় ওয়াজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ওয়াজিদের মরদেহ উদ্ধারের পরপরেই আহাজারিতে ফেটে পড়েন মা কাকলী বেগম, ‘তিনি বলতে থাকেন কোরআন খতম দেওয়ার জন্য আরবি পড়তে পাঠাইছিলাম। আমার মানিক আর আইলো না। আমি ওরে ছাড়া বাঁচুম কেমনে? আমার তো এই একটাই মানিক। মানিক আমার কোরআন শরীফ রাইখা আসতে চায় নাই।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ‘ধসে পড়া ভবনের দেয়াল কেটে ভেতরে ঢুকেও উদ্ধার অভিযানে ওয়াজিদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। হয়তো সে ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল। কাদামাটির কারণে পানির নিচে নেমেও অনুসন্ধানে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও উদ্ধারকর্মীরা দেড় ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর শিশু ওয়াজিদের দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

উল্লেখ্য, গত রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১নং বাবুরাইল এলাকাতে খালের ওপর নির্মিত এইচএম ম্যানশন নামের ভবনটি ধসে পড়ে। ৪ তলা ভবনের নিচে তলায় আরবি পড়তে গিয়েছিলেন ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদ, তার খালাতো ভাই সোয়াইব ও সমবয়সী স্বপ্না। আছরের আযানের পরপরই পশ্চিম দিকে কাত হয়ে ধসে পড়ে ভবনটি।

সেখান থেকে বেরিয়ে আসা স্বপ্না জানান, ঘরের ভেতরে সবাই যখন পানির দিকে যেতে থাকে তখন সে খাটের পায়া ধরে রাখে। সোহাইনের উপর ভারী আসবাব পড়ায় সে উঠতে পারে না, আর ওয়াজিদ গড়িয়ে বারান্দার দিকে যেতে থাকে। ওয়াজিদ স্বপ্নার হাত ধরলেও বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। সে বারান্দার দিকে গড়িয়ে চলে যায়। ঘরের বারান্দার অংশটি খালের পানিতে ডুবে যায়।

এদিকে, উদ্ধারের পরপরই কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যা। একই সঙ্গে ভবনটির আশপাশের অন্যান্য বাড়িগুলোকেও খালি করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা ইউএনও নাহিদা বারিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর