বান্দরবান সদর হাসপাতালে অস্থায়ী রান্নাঘর ও গ্যারেজ নির্মাণে কোটি টাকা ব্যয় দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন প্রকৌশলীর যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে একটি ঠিকাদারী চক্র প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা লোপাট করেছে। আর গণপূর্ত বিভাগের দাবি, টেন্ডারের বাইরে আরও অনেক কাজ করায় এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে একশ শয্যার বান্দরবান সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে সরকার। এ জন্য হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণে ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরাতন রান্নাঘর ও গ্যারেজ। ফলে অস্থায়ীভাবে একটি রান্নাঘর ও গ্যারেজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ।
হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদার চট্টগ্রামের রয়েল অ্যাসোসিয়েটকে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে রান্নাঘর এবং ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্যারেজ ও সিকিউরিটি গেইট নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু টেন্ডারের ডকুমেন্টে আলোচিত যুবলীগ নেতা জি. কে শামীমকে ২ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার দেখানো হয় এবং তার মালিকানাধীন জি. কে বিল্ডার্সের ওয়ার্কডান সার্টিফিকেট (কার্যসম্পন্ন অভিজ্ঞতাপত্র) ব্যবহার করা হয়। যদিও গণপূর্তের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, কাজটি করছে চট্টগ্রামের রয়েল অ্যাসোসিয়েট।
এদিকে হাসপাতালের অস্থায়ী রান্নাঘর ও গ্যারেজ নির্মাণ কাজে বিশাল অংকের অর্থ লোপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৭ ফুট বাই ৩৬ ফুটের আধা পাকা টিনশেড রান্নাঘর এবং ১৫ ফুট বাই ২৮ ফুটের আধা পাকা টিনশেড গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাশেই ২৮ ফুট লম্বা ও ৮ ফুট উচ্চতার লোহার গ্রিলের একটি সিকিউরিটি গেইটও নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী ও স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে জানান, টিনশেড রান্না ঘর, গ্যারেজ ও গ্রিলের সিকিউরিটি গেইট নির্মাণে নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়েছে। যা নির্মাণে ২০-২৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা কিভাবে এত টাকা ব্যয় দেখালেন সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। এটা উন্নয়নের নামে সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
বান্দরবানের সিভিল সার্জন ডা. অংশৈ প্রু বলেন, ‘হাসপাতালের জন্য অস্থায়ী একটি রান্না ঘর ও গ্যারেজ নির্মাণে কত টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল এবং টেন্ডারে কী কাজ দেখানো হয়েছে- তা আমার জানা নেই। ইতোমধ্যে অস্থায়ী রান্নাঘর ও গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া কিছু সংস্কার কাজও করা হয়েছে। তবে আমরা এখনও কাজ বুঝে পাইনি।’
নির্মাণ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকোশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ‘২টি টেন্ডারে ৫০ লাখ টাকা করে কোটি টাকা ব্যয়ে রান্নাঘর ও গ্যারেজের কথা উল্লেখ আছে। তবে এর বাইরে সিকিউরিটি গেইট, হাসপাতাল ও আবাসিক কোয়াটারের জন্য টাইলস, থাইগ্লাস, ইলেকট্রিক ফিটিংস, সৌন্দর্যবর্ধন ও সীমানা প্রাচীর সম্প্রসারণের কাজ করা হয়েছে। কিন্তু টেন্ডারে এসব কাজ উল্লেখ ছিল না। ইতোমধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার ৬০ শতাংশ বিলও তুলে নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাজটি এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কাজটি বুঝে নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর অর্থ লোপাটের অভিযোগ সত্য নয়।’
অন্যদিকে, বান্দরবানের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌমেন মল্লিক বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সে অনুযায়ী শতভাগ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষকে কাজটিও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজে কোনও অনিয়ম হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০-৮৫ লাখ টাকার বিলও নিয়েছেন। কাজের সম্পূর্ণ বরাদ্দ না পাওয়ায় শতভাগ বিল দেয়া সম্ভব হয়নি।’